সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঐতিহ্যবাহী শুটকি মেলা ও “বিনিময় প্রথা” অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা পুঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী যুগ যুগ ধরে পহেলা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল) নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে জমে উঠে ঐতিহ্যবাহী এই শুটকি মেলা। প্রতি বছরের মতো গত সোমবার কুলিকুন্ডা গ্রামে জমে উঠে দিনব্যাপী এই শুটকি মেলা।
মেলায় প্রায় দুই শতাধিক জাতের শুটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। শুটকির মধ্যে ছিলো বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুটি ও টেংরাসহ নানান জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি। তবে দেশী মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই ছিল বেশী। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও আমদানি করা বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি।
মেলায় নাসিরনগর ও আশপাশ এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুটকি নিয়ে আসেন। সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমের শুটকি উঠে এই মেলায়।
শুটকি ছাড়াও এ মেলায় আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “বিনিময় প্রথা” অর্থ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এই মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে শুটকি বিক্রি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুইশ বছরেরও অধিক সময় ধরে বাংলা পুঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী পহেলা বৈশাখে এই মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও বাহারি শুটকির আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা মেলায় আসেন শুটকি কিনতে। পছন্দের শুটকি কিনে তারা হন তৃপ্ত ।
মেলায় শুটকি কিনতে আসা উপজেলার জেঠা গ্রামের নাসির মিয়া জানান, আমি যখন ছোট তখন বাপ-দাদার সাথে এই মেলা এসেছি। আর এখনও শুটকি নেয়ার জন্য মেলায় আসি।
কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক মেম্বার বাচ্চু ভুইয়া জানান, শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। এখনো বহু পুরনো প্রথা প্রচলন থাকায় আমরা ধারণা করছি, এ মেলা আদিম কালের। তিনি বলেন, আলু, ডাল, সরিষা, পেয়াজ, রসুনসহ এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি ক্রয় করেন। তবে এই রীতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, একদিনের মেলায় লাখ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি করা হয়। শুটকি বিক্রির লাখ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে। তিনি বলেন, এবারের মেলায় প্রায় দুইশতাধিক জাতের শুটকির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। তবে এবার শুটকীর আমদানি বেশী হলেও দাম ছিল চড়া।
স্থানীয়দের মতে ব্যতিক্রমধর্মী শুটকি মেলার পাশাপাশি পণ্যের বিনিময়ে পণ্য যুগ যুগ ধরে চালু রয়েছে। এই মেলা নাসিরনগরের ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করে।
এদিকে উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরেও একই দিনে বসে “বিনিময় প্রথা” অর্থ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। এখানে বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র।
স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাড়ি, পাতিল, কলস, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি-বাটি, পুতুল ও প্রদীপ মেলায় মানুষের নজরকাড়ে। গ্রাম্য মেয়েদের সামান্য পয়সা সংগ্রহের জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয়েছে এ মেলায়।
###