স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতি তান্ডবের সময় মাদরাসার ছাত্রদের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারনে জেলা পরিষদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম। গতকাল রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে জেলাজুড়ে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির নির্মান ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও জনকল্যানমূলক কর্মকান্ড সম্পাদক করা হয়। গত বছরও জেলার ৩২১টি মসজিদ ও মাদরাসায় জেলা পরিষদ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, গত ২৬ মার্চ বিকেলে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ চলাকালে চার থেকে পাঁচশ মাদরাসার ছাত্র পৌর এলাকার কাউতলীতে অবস্থিত জেলা পরিষদের ডাক বাংলো ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ডাকবাংলোতে অবস্থানরত তিনজন নির্বাহী মাজিষ্ট্রেট এবং দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার কোন রকমে আত্মরক্ষা করে এবং তিনতলার উন্নয়নকাজে নিয়োজিত একজন নির্মান শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। বর্তমানে সে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, হেফাজতের নেতা-কর্মীদের দেয়া আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেন নি। তিনি বলেন, ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডে ডাকবাংলোর প্রায় ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই ঘটনায় ৪ মে সদর থানার একটি মামলা দায়ের করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম আরো বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল চলাকালে মাদরাসার ছাত্র ও দুষ্কৃতিকারীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও তান্ডব চালায়। এ সময় মাদরাসার ছাত্ররা জেলা পরিষদ ভবনের নীচতলায় অগ্নিসংযোগ করে গ্যারেজে রাখা একটি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে হামলারকারীরা দোতলার বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে কম্পিউটার, স্ক্যানার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, ১৫টি এসি, ৫টি কম্পিউটার টেবিল, ১২টি কম্পিউটার চেয়ার, ১২টি স্টীলের আলমারী, ৩টি কাঠের আলমারী, ১৫টি দরজাসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, সিসি ক্যামেরা, ফটোকপি মেশিন, স্টীলের ফাইল কেবিনেটসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। তাদের তান্ডবে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রায় দুই কোটি টাকা লাগবে।
তিনি বলেন, শুধু জেলা পরিষদ কার্যালয়ই নয়, ওইদিন মাদরাসার ছাত্ররা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ চারটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকা দু’দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মেয়রের বাসভবন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়সহ ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। তিনি তান্ডবের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সচিব মেহের নিগার, সহকারি প্রকৌশলী আবদুল হামিদ, জেলা পরিষদের সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।