স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া

অবশেষে আগামী ১৫ জুন (মঙ্গলবার) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে শুরু হচ্ছে ট্রেনের যাত্রাবিরতি। মঙ্গলবার থেকে তিনটি মেইল ট্রেন, একটি কমিউটার ট্রেন ও পরদিন বুধবার থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশান শাখার উপ-পরিচালক (অপারেশন) মোঃ রেজাউল হক স্বাক্ষরিত একটি পত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, সাময়িকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে ‘ডি ক্লাশ’ স্টেশনে রূপান্তর করে ট্রেন চালু করা হচ্ছে।

রেলওয়ের চিঠি থেকে জানা যায়, ১৫ জুন ঢাকা-সিলেট-ঢাকা পথের সুরমা মেইল, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ পথের নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস, আখাউড়া-ঢাকা-আখাউড়া, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা পথের তিতাস কমিউটার ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে। ১৬ জুন (বুধবার) থেকে যাত্রাবিরতি করবে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের পারাবত এক্সপ্রেস।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ হেফাজতের তান্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন। পরদিন ২৭ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে পূর্ব নির্ধারিরত সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দেয়া হয়।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে সংস্কার করে পূর্ব নির্ধারিত সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে সন্ত্রাস বিরোধী মঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি সংগঠনের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা থেকে ২০ জুনের মধ্যে ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবিতে আল্টিমেটাম দেয়া হয়।

আগামী মঙ্গলবার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে শুরু হচ্ছে ট্রেনের যাত্রা বিরতি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ১৩৭তম জন্মদিন ছিলো গতকাল শুক্রবার। তার জন্মদিনে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তিনটি প্রস্তাব করা হযেছে।
প্রস্তাবগুলো হচ্ছে উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সরাইলের কালিকচ্ছে তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান, নতুন প্রজন্ম যাতে জানতে পারে সেজন্য তার তাঁর কর্মকান্ডকে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা ও প্রতিবছর সরকারি ভাবে তাঁর জন্মদিনে আলোচনা সভার আয়োজন করা।

বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায়। ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তাঁর পিতা দ্বিজদাস দত্ত ছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয় আদর্শের সাধক।  উল্লাসকর দত্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন, এবং পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিদ্যায় ডিগ্রী অর্জন করেন। তবে কলেজে পড়ার সময় ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল বাঙালিদের সম্পর্কে কটূক্তি করার দরুন উল্লাসকর তাকে আঘাত করেন, এজন্য উল্লাসকরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল । এই সময় থেকে তার জীবনে পরিবর্তন আসে। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট স্বদেশী আন্দোলন কালে তিনি অনুশীলন দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এ সূত্রে ক্ষুদিরাম বসু ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এর সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল।

উল্লাসকর দত্ত তখন ‘অভিরাম’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। তাঁর তৈরি বোমা ছুড়েই ক্ষুদিরাম ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে বহনকারী গাডিড় ভেবে ভুল করে দুজন ইংরেজ মহিলাকে হত্যা করেছিলেন। এ অপরাধে ২ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ উল্লাসকরকে মুরারিপুকুর বাগান থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরের দিনই মোজাফফরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইংরেজ ব্যারিস্টার কেনেডি সস্ত্রীক নিহত হন। এ সকল ঘটনা ইংরেজ মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ কলকাতার মানিকতলায় বোমা তৈরির গোপন কারখানাটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে, ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত বোমাটি ছিল উল্লাস করের তৈরী।

বিচারে ক্ষুদিরাম ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে মানিকতলা (আলীপুর) বোমা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে উল্লাসকরকেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তবে ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হলে উল্লাসকর তাঁর আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাশ-এর বিজ্ঞতায় অব্যাহতি পান ও ১৯০৯ সালে বারীন ঘোষের সঙ্গে তিনি আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হন। ১৯২০ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে জন্মভূমি কালীকচ্ছের বাঘবাড়িতে উল্লাসকর ফিরে আসেন। দীর্ঘ দশবছর নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করার পর জীবনের শেষ দিনগুলি নিজেদের আখড়ায় কাটানোর বাসনায় তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

এ দিকে উল্লাসকর দত্তের জন্মদিনে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারের ৩টি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সরাইলের কালিকচ্ছে তাঁর পৈত্রিক ভিটিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান, তাঁর কর্মকান্ডকে লিপিবদ্ধ করে একটি কক্ষে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখা এবং প্রতিবছর তাঁর জন্ম দিনে আলোচনা সভার আয়োজন করা।
এ ব্যাপারে সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বাবুল বলেন, আজকের প্রজন্ম বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তকে খুব একটা জানে না। নতুন প্রজন্ম যাতে উল্লাস কর দত্তকে জানতে পারে সেজন্য সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ১৩৭তম জন্মদিন পালিত, সরাইল প্রেসক্লাবের তিন প্রস্তাব

ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান :

জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- আর ফাইলের মসজিদ (সরাইল), উলচাপাড়া মসজিদ (সদর), কাল ভৈরব মূর্তি ও মন্দির (সদর), বাসুদেব মূর্তি (সরাইল), ঐতিহাসিক হাতিরপুল (সরাইল), কৈলাঘর দুর্গ (কসবা), ভাদুঘর মসজিদ (সদর) বাঁশীহাতে শিবমূর্তি (নবীনগর), আনন্দময়ী কালী মূর্তি (সরাইল), আর্কাইভ মিউজিয়াম (সদর) ইত্যাদি।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ, নবীনগরের ষাঁড় দৌড়, গরুর লড়াই, সরাইলের মোরগ লড়াই, বারনী বা বান্নি মেলা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দর্শনীয় স্থান সমূহ

botv নিউজ:

হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের হৃদয়ভূমি আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলাদেশের যে অঞ্চলসমূহ সংগীত, শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অন্যতম। এই জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বললে বোধ হয় বেশি বলা হবে না। তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংগীত, শিল্প সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থ ক্ষেত্র রূপে ভারতীয় উপমহাদেশে সুপরিচিত একটি জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গানের দেশ গুনীর দেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন জ্ঞানী-গুনীর খনি স্বরূপ। অসংখ্য জ্ঞানী-গুনীর বিভিন্ন অবদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপমহাদেশব্যাপী ও বিশ্বব্যাপী আজ পরিচিত।

মেঘনা-তিতাসের পলি মাটির আবাহনে বাঁধা এ ভূখন্ড লোক সংস্কৃতির দিক থেকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। সামাজিক ও ভূ-প্রকৃতির বিন্যাস, নদ-নদী ও জলবায়ুর প্রভাব, জনবসতির ধরন, লোকসমাজের আচার বিশ্বাস, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য এবং নিরন্তর, পরিবর্তনশীল মানসিক পরিমন্ডলের মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার বিচিত্র বহুমাত্রিক এবং অভ্যন্তরীণ গতিশীলতায় সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতি। বস্তুধর্মী ও সাহিত্যধর্মী উভয় শ্রেণীর লোক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ঐশ্বর্যশালী। তিতাস নদী আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তিতাস অববাহিকায় কিংবা পলি কাদায় জন্মগ্রহণ করেছে বিশ্ববিখ্যাত অনেক কৃতী সন্তান। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ থেকে শুরু করে শচীন দেব বর্মন ও সুবল দাস পর্যন্ত সুরের যে ইন্দ্রজাল সৃষ্টি হয়েছে তা এখন সৈয়দ আব্দুল হাদীর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সুদৃঢ় ভিত্তিমূলের উপর প্রতিষ্ঠিত।

অপরদিকে এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেছে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। মোগল আমলে নির্মিত সরাইলের আরফাইলের মসজিদ ও হাতিরপুল, কালভৈরব মন্দির, খড়মপুরের কেল্লাশাহ মাজার, নবী নগরের সতীদাহ মন্দির, বাঁশীহাতে শিবমূর্তি, সাধক মনমোহনের আনন্দ আশ্রম, হাছান শাহ মাজার, কসবার কৈলাঘর দূর্গ, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামালের কবর এ জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে স্মরণ করে দেয়। এ জেলার ছানামুখী মিষ্টি, বিলম্বী ফল। বিলম্ব যা সারাদেশে (দু্রাপ্য), মৃৎশিল্প, তাঁত শিল্প, যাত্রা, তিতাসে নৌকাবাইচ, পুতুল নাচ, সরাইলের মোরগের লড়াই সারা দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।

###

সাহিত্য-সংস্কৃতি তীর্থভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া

কৃষ্টি/ঐতিহ্য :      

সরাইলের হাসলি মোরগ লড়াই,

নৌকা বাইচ,

ভাদুঘরের বান্নী(মেলা)

খড়মপুর কেল্লাশাহ (র) মাজার শরীফ এর বার্ষিক ওরশ,

নবীনগরের বৈশাখী মেলা ইত্যাদি।

দর্শনীয়/ঐতিহাসিক স্থান :

বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি  =আখাউড়া

কোল্লাপাথর সমাধি              =কসবা

শহীদ স্মৃতি সৌধ (ফারুকী পার্ক)      = ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর

আরিফাইল মসজিদ                         = সরাইল

কল্লাশহীদ (র:) মাজার শরীফ            = আখাউড়া

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খার বসত বাড়ি   =নবীনগর

কাল ভৈরব বিগ্রহ                          =ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর

হাতিরপুল                                   = সরাইল

আনন্দময়ী কালিমুর্তি                 =সরাইল

বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়ি       = সরাইল

বাশি হাতে শিব মন্দির               =নবীনগর

  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার  ঐতিয্য 

ফেসবুকে আমরা..