স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রসূতি মায়েদের কাছে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠছে সদর উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। সদর উপজেলার ১১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গত বছরও মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার ছিলো শুন্য। গত কয়েক বছর ধরেই এটা অব্যাহত আছে। সদর উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত পরিবেশ ও সেবার মান অন্যান্য হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের চেয়ে অনেক উন্নতমানের। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়।
গত এক বছর আগ থেকে ক্লিনিকগুলোতে সেবার মান পাল্টাতে থাকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সমন্বিত প্রয়াসে প্রসূতি মায়েদের সেবার ধরণ পাল্টাতে শুরু করে। মূলত সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আকিব উদ্দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় অন্যান্য সব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। দ্রুত এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান এলাকাবাসী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তালশহর (পূর্ব) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় অন্যরকম পরিবেশ। কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মোহছেনা আক্তার বলেন, জুলাই মাসে তালশহর ইউনিয়নে প্রসূতি মায়ের সংখ্যা ছিলো ২৮ জন। এর মধ্যে এই কেন্দ্রে ১৪ জন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি হয়। তিনি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি সকল গর্ভবতী মাকে আমাদের এখানকার সেবা দেয়ার জন্য। কিন্তু অনেকেই শহরমুখী হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চলে যান।
সদর উপজেলার নাটাই (উত্তর) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের সাকিনা বেগম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামের সাকিনা বেগম নামে দুই প্রসূতি নারী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জের সকিনা বেগমের মা মর্জিনা বেগম জানান, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সব ধরণের সুবিধা থাকায় গর্ভবতী মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি থেকে এখানে নিয়ে এসেছি। এখানকার সুযোগ সুবিধা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খুবই ভালো।
কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়, এখানে ডপলার মেশিন, পালস অক্সিমিটার, অক্সিটক্সি ইনজেকশন, স্ট্রিপ, প্রেশার মাপার যন্ত্র, হিমোগ্লবিন পরীক্ষার যন্ত্র, ওজন মাপার যন্ত্র, নেবুলাইজার, বেবি ম্যানেজম্যান্ট টেবিল, অক্সিজেন সিলিন্ডার, থেকে শুরু করে মায়েদের প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব ধরণের সুবিধা রয়েছে। এখানে রক্তদাতাদেরও একটি তালিকাও সংরক্ষণ করা হয় যেন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করা যায়। আছে মায়েদের জন্য একটি ব্যাংক। যেটি গর্ভধারণের পর দরিদ্র মায়েদেরকে দেয়া হয় অনাগত সন্তান্তের জন্য সঞ্চয় করতে। আছে সৌর বিদ্যুৎ ও আইপিএস এর ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসে এখানে ২৫৫ জন মা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে একজনের বেশি মা এখানে সন্তান জন্ম দেন। তবে সেবাগ্রহিতা মায়ের সংখ্যা আরো বেশি।
কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক ফরিদা আক্তার খানম জানান, তাঁর জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনের উপর তলায় থাকার ব্যবস্থা আছে। যে কারণে তিনি দিন-রাত এখানে কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রে যদি একজন চিকিৎসক দেয়া হয় তাহলে মানুষের আস্থা আরো বাড়বে। প্রসূতি মায়েদের সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেবাও দেয়া যাবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আকিব উদ্দিন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদানের পর আমি চেষ্টা করি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রসূতি মায়ের সেবা বাড়ানোর জন্য। ইউএনও মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় সেবার মান বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, সদর উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ২০১৮-২০১৯ সালে ৫৬০টি, ২০১৯-২০২০ সালে ৭৫৪টি ও ২০২০-২০২১ সালে ১২৬১টি নরমাল ডেলিভারী হয়। এসব ডেলিভারীতে একজন শিশু ও মা মারা যায়নি। যে কারণে প্রতিনিয়তই এখানে সেবা গ্রহিতা প্রসূতি মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা মহামারির এই সংকট কেটে গেলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সমন্বিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে এসব কেন্দ্রগুলোকে গড়ে তুলতে চাই। সহযোগিতার জন্য যখন যেখানে বলেছি সাড়া পেয়েছি। এতে করে এখানে আগের চেয়ে সেবার মান অনেক বেড়েছে। কেন্দ্রগুলো সারাদেশে মডেল হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করি।’