botv-নিউজ:
আশুগঞ্জ উপজেলার চর-চারতলা ও চর-লালপুর চরে ইজারাদারদের ড্রেজিংয়ের কারনে দেড়শ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনা নদীতে বালু মহালের নির্ধারিত জায়গা থাকলেও মালিকানাধীন ফসলি জমিতে একাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। মাটি কেটে নেওয়ায় কারনে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জেলা প্রশাসকের কাছে কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করলেও ড্রেজার মালিকরা তাদের বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। অভিযোগকারীরা জানান, ইজারাদাররা বালু উত্তোলনে মানা হচ্ছে না বালু মহালের কোন নিয়ম কানুন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর পাশের চর-চারতলা, চর-লালপুর, রায়পুরা ও বেগমাবাগ এলাকার বালু মহাল ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য ছাত্রদল নেতা সেলিম পারভেজ, চর-চারতলা গ্রামের জয়নাল মিয়া, লালপুরের ডা. ফারুক, রফিক ও
নরসিংদীর চানপুরের সুলতান মিয়া ইজারা নেয়। প্রভাবশালী ইজারাদাররা বালু মহালের নির্ধারিত জায়গায় ড্রেজিং না করে বালু মহালের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বিএস খতিয়ানের নক্সাভুক্ত মালিকানাধিন চরে রাতের আধাঁরে ড্রেজিং করে। এতে প্রায় ১’শ ৫০ একর ফসলি জমি কেটে নিয়ে যায় প্রভাবশালীরা। এতে করে জমির মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছেন। অতিরিক্ত গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় প্রতিনিয়ত ভাঙছে ফসলী জমি।
এতে করে প্রতিদিন ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। ইজারাদারদের সাথে বিষয়টি কথা বললেও তারা বিষয়টি আমল দিচ্ছেননা। এতে করে যেকোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাঁধতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। তাই ভুক্তভোগী ৮০ জন কৃষক প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বর্তমানে সততা, ফাইভস্টার, মৌসুমী, মায়ের দোয়াসহ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার সময় আশপাশে সতর্কতা চিহ্ন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। নদীর তীর থেকে প্রায় ৩’শ ফুট দূরে মাটি ড্রেজিং করার কথা থাকলেও সেটিও মানছেনা ইজারাদাররা। বালু মহালের নির্দিষ্ট সীমানা দেয়া থাকলেও এর কোন তোয়াক্কা না করে যত্রতত্রভাবে মাটি ড্রেজিং করা হচ্ছে।
সকাল সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাটি কাটার কথা থাকলেও রাতের অন্ধকারে মাটি কাটা হচ্ছে। তারা বলেন, এতে করে মেঘনা নদীর চরলালপুর ও চরচারতলা মৌজাসহ কয়েকটি এলাকার ফসলি জমি ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হতে চলেছে।
এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ করেছেন ড্রেজার মালিকরা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় তাদেরকে। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলেননি তারা।
লালপুরের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন জমি মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে পানি বেশী ছিল তখন আমরা বিষয়টি টের পাইনি। পানি কমার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি আমাদের ফসলি জমি কেটে নেয়া হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে তাদের সাথে কথা বললেও তারা আামাদের কোন পাত্তাই দেয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়েই অভিযোগ করেছি।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক খলিলুর রহমান জানান, আমরা অভিযোগ দেয়ার পর তড়িঘড়ি করে ড্রেজার মালিকরা আমাদের সাথে আপোষ করার জন্য প্রভাবশালীদের নিয়ে শালিসে বসে। তারা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক মোঃ সেলিম পারভেজ ও জয়নাল মিয়া জানান, আমরা বালু মহালের ইজারার নিয়ম অনুযায়ী নদীতে ড্রেজিং করেছি। সব ধরনের নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। ফসলি জমি আমরা ড্রেজিং করি নাই। যে অংশে ভাঙ্গনের সৃস্টি হয়েছে তা সরকারী জায়গা। তবে এলাকাবাসীর অনুরোধে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জমি যেন ঢেউয়ের কারনে ভেঙে না যায়
সেজন্য মাটি ফেলে আমরা একটি বাধঁ দিয়ে দিচ্ছি। বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীনা আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা আমাদের কাছে তাদের লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। আমরা আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠিয়েছি।
###