ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর থাকা জরাজীর্ণ ব্রীজের রেলিং ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্রীজটি দিয়ে সীমিত আকারে হালকা যানবাহন চলাচল করছে।
ফলে ভারী ও মাঝারী আকারের যানবাহনগুলো চলাচল করছে বিকল্প পথ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ সড়ক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে। এতে করে আঞ্চলিক সড়ক দুটোতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহনে থাকা যাত্রীরা সীমাহীন দুভোর্গের শিকার হচ্ছেন।
ঢাকা থেকে বৃহত্তর সিলেটগামী যানবাহনগুলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ সড়ক দিয়ে এবং বৃহত্তর সিলেট থেকে আসা ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী যানবাহনগুলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা-আখাউড়া আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এদিকে আঞ্চলিক সড়ক দুটো সরু এবং ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড থেকে নাসিরনগরের ধরন্তিঘাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া আঞ্চলিক সড়কের বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা থেকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর থাকা পুরানো ও জরাজর্ণ ব্রীজটির পূর্বদিকের রেলিং ভেঙ্গে সেতুর একাংশসহ নদীতে পড়ে যায়। এরপর থেকে ব্রীজটির উপর দিয়ে ভারী এবং মাঝারি আকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরু ও আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে ভারী ও মাঝারী আকারের যানবাহন চলাচল করছে। সড়ক দুটোতে যানজট। বিশেষ করে সরাইলের বিশ্বরোড থেকে শাহবাজপুর ব্রীজের গোড়া পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে ভারী যানবাহন ( ট্রাক) পার্কিং করা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাতের বেলা টাকার বিনিময়ে পুলিশ এসব ভারী যানবাহন শাহবাজপুর ব্রীজের উপর দিয়েই পারাপার করছে। আবার কিছু ভারী যানবাহন রাতের বেলা সড়কে চাপ কমে আসলে বিকল্প সড়ক দিয়েই চলাচল করে।
বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এই রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি সরু হওয়ায় এবং সড়কের ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় সদর উপজেলার বিশ্বরোড থেকে নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক পর্যন্ত অত্যন্ত ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজিব আহমেদ রাজ্জি অভিযোগ করে বলেন, শাহবাজপুর ব্রীজটি অত্যন্ত পুরানো ও জরাজীর্ণ। এই ব্রীজের পাশেই তিতাস নদীতে আরেকটি ব্রীজ নির্মান করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন ব্রীজটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশকে ম্যানেজ করে জরাজীর্ন ব্রীজ দিয়ে অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় ব্রীজটি বিকল হয়। ব্রীজের রেলিংসহ একাংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে খাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হোসেন সরকার জানান, ব্রীজটি বিকল হওয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তিনি বলেন, দুটো আঞ্চলিক মহাসড়কেই তীব্র যানজট। তবে তা শুক্রবার চাপ একটু কম ছিলো।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ যদি পুরানো ও জরাজীর্ন শাহবাজপুর ব্রীজটির সঠিকভাবে তদারকি করতো তাহলে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতোনা।
রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, বিকল্প সড়ক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি সরু হওয়ায় এবং এর ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় প্রতিদিনই এই সড়কে যানজট হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে যানজট প্রথম দুদিনের তুলনায় শুক্রবার কম ছিল বলে তিনি জানান।
রফিক উদ্দিন ঠাকুর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজের সংস্কার কাজ শেষ করে ব্রীজটি যানবাহনের চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজের পাশে নির্মাণাধীন নতুন ব্রীজের নির্মান কাজ শেষ করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল আমীন বলেন, ব্রীজটির মেরামত কাজ পুরোদমে চলছে। তিনি বলেন, মেরামত কাজ শেষ হতে আরো ১১দিন লাগবে। তিনি বলেন, বিকল্প সড়ক দুটো সরু হওয়ায় এবং সড়ক দুটোর ধারন ক্ষমতা কম থাকায় কিছু যানজট আছে।
###