স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবকালে শহরজুড়ে ব্যাপক হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে হেফাজত নেতাদের মিথ্যাচার ও কটুক্তির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্ত্বরে সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন চলাকালে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মুসলিম মিয়া সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ.এইচ মাহবুব আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়।

এসময় হামলাকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা কার্যালয়, সুর স¤্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সুর স¤্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, মাতৃ সদন, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, পৌর মেয়রের বাসভবন, সার্কিট হাউজ, হাইওয়ে থানা ভবন, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাম্পাস, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি, বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।

বক্তারা এসব হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার আমীর মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং সাধারন সম্পাদক মুফতি মোবারক উল্লাহ দায়ী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিবকে অবাঞ্চিত ঘোষনা

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অর্থায়নে পিফরডি প্রকল্পের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পলিসি ফোরামের (ডিপিএফ) ভার্চুয়াল সভা গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আরজু সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সাংবাদিক মোহাম্মদ আরজুকে সভাপতি, ইশা সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তাপসী রায়কে সহ-সভাপতি ও উপলব্দি সমাজকল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোঃ শরীফ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য পদে রয়েছেন ১৭ জন।

সভায় প্ল্যাটফরম ফর ডায়ালগের (পিফরডি) ডিস্ট্রিক ফ্যাসিলেটর খোদেজা বেগম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক কো-অর্ডিনেটর মোঃ আলমগীর মিয়া উপস্থিত ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পলিসি ফোরাম জেলায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কাজ করবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পলিসি ফোরামের কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুইশত অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে ‘বন্ধু ফাউন্ডেশন’।
সোমবার বিকেলে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে ইফতার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। এ উপলক্ষ্যে সংগঠনের সভাপতি মৃধা মাহবুব এলাহী প্রদ্যোৎ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা।

সরাইল প্রেসক্লাবের সাহিত্য সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রিপনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ সৈয়দ তানবির হোসেন কাউসার, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো. জাহাঙ্গীর আলম, সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান, কমিউনিষ্ট পার্টির সরাইল উপজেলা শাখার সভাপতি দেবদাস সিংহ রায় ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. কায়কোবাদ।

বন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সরাইলে দুইশত পরিবারের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, বর্তমানে কৃষি খাতকে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য যোগানের জন্য কৃষির আধুনিকায়ন খুবই জরুরী। সরকার কৃষক ও কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষিখাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদেরকে শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন ও বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ দিচ্ছে।

তিনি সোমবার বেলা ১১টায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে ৫জন কৃষকের মধ্যে ৫টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন ও উফশী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রনোদণা কর্মসূচীর আওতায় সদর উপজেলার দুই হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ধান বীজ ও সার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়–য়ার সভাপতিত্বে সার, বীজ ও কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি আরো বলেন, সরকার কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের তান্ডবের সময় মাদরাসার ছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পৌর সভা কার্যালয়, ভূমি অফিসসহ সরকারি, বে-সরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। সেবাদানকারী সংস্থাগুলো ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয়ায় জনগনের ভোগান্তি বেড়েছে। তিনি ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, হেফাজত যে কাজগুলো করেছে তা ইসলাম সম্মত নয়। এতে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. এইচ মাহবুব আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন।

আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি কৃষকদের হাতে এই সার, বীজ ও কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিনের চাবি তুলে দেন। একই অনুষ্ঠানে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি সদর উপজেলার ১৬২জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭লাখ ৮৩ হাজার ৯শত টাকা চেক এবং ১৭জন শিল্পীর প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদর উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন ও উপকারভোগী কৃষকগন উপস্থিত ছিলেন।

১৭ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য যোগানের জন্য কৃষির আধুনিকায়ন জরুরী – মোকতাদির এমপি

 

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে নিরীহ অটো চালক দেলোয়ার হোসেন খুনের ঘটনায় গ্রামজুড়ে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানায়, ৭ এপ্রিল দক্ষিন পাড়া গ্রামের কাসেম মিয়ার জমিতে কাজ করতে যায় শাহ আলী ও সিদ্দিক গ্রুপের দু’ দল শ্রমিক। পরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। জানতে পেরে রাতেই স্থানীয় চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিষয়টির মিমাংসা করে দেন। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার রাতেই শাহ আলীর লোকজন ওই গ্রামের দুর্গত গোষ্ঠীর হান্নান মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেনকে ছুরিকাঘাত হত্যা করে।

দোলোয়ারের হত্যার ঘটনায় নিহতের মা পাকশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে ৩৮ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করে। নিহত দেলোয়ারের মা জানান, আমার ছেলে একজন অটোরিক্সা চালক। এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতের সাথে সে জড়িত ছিল না। দিনভর অটো চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

এদিকে মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতংকে প্রতিপক্ষের পুরুষরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন চেয়ারম্যান সাইফুলের সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় তারা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও গৃহপালিত প্রাণিও নিয়ে যায়। সরজমিনে দেখা যায়, পরবর্তী হামলার আশঙ্কায় এখনো অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী মালেকা বেগম জানান, তার ঘরে রক্ষিত সোনাদাসাসহ সবকিছুই লুট হয়ে গেছে। এদিকে ঘটনার পরপরই এলাকার শাস্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের স্ত্রী শামসুন্নাহার ববি জানান, গ্রামে দুটি প্রতিদ্বন্ধী গ্রুপ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে আমার স্বামী সেটি মীমাংসা করে দেন। খুনের ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। প্রতিপক্ষের লোকজন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার স্বামীকে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, আমার গোষ্ঠীর লোক খুন হলৌ উল্টো আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মিথ্যা মামল দিয়ে হয়রাণি করছে। আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে তারা অপপ্রচারসহ হামলা, মামলা করে হয়রাণি করছে। এর পেছনে সাবেক চেয়ারম্যান কাছম আলীর হাত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তিনি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।

সরাইল থানার এ,এস,আই জানান, ঘটনার পর থেকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা এখানে নিয়োজিত আছি। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সংঘাত এড়াতে আমরা নিয়োজিত থাকব।

সরাইলে দ্বন্দ্বের জেরে যুবক খুন, আতংকে গ্রাম ছাড়ছে প্রতিপক্ষের লোকজন

১২/০৪/২০২১খ্রিঃ

বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) আজ  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর করেছেন। সকাল ১১.০০ ঘটিকায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে  ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলার আইন-শৃঙ্খলা ও সার্বিক বিষয়াধি নিয়ে মত বিনিময় করেন।

বিকেলে তিনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ত্যাগ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতি তান্ডবের সময় মাদরাসার ছাত্রদের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারনে জেলা পরিষদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম। গতকাল রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে জেলাজুড়ে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির নির্মান ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও জনকল্যানমূলক কর্মকান্ড সম্পাদক করা হয়। গত বছরও জেলার ৩২১টি মসজিদ ও মাদরাসায় জেলা পরিষদ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, গত ২৬ মার্চ  বিকেলে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ চলাকালে চার থেকে পাঁচশ মাদরাসার ছাত্র পৌর এলাকার কাউতলীতে অবস্থিত জেলা পরিষদের ডাক বাংলো ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ডাকবাংলোতে অবস্থানরত তিনজন নির্বাহী মাজিষ্ট্রেট এবং দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার কোন রকমে আত্মরক্ষা করে এবং তিনতলার উন্নয়নকাজে নিয়োজিত একজন নির্মান শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। বর্তমানে সে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, হেফাজতের নেতা-কর্মীদের দেয়া আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেন নি। তিনি বলেন, ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডে ডাকবাংলোর প্রায় ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই ঘটনায় ৪ মে সদর থানার একটি মামলা দায়ের করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম আরো বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল চলাকালে  মাদরাসার ছাত্র ও দুষ্কৃতিকারীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও তান্ডব চালায়। এ সময় মাদরাসার ছাত্ররা জেলা পরিষদ ভবনের নীচতলায় অগ্নিসংযোগ করে গ্যারেজে রাখা একটি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে হামলারকারীরা দোতলার বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে কম্পিউটার, স্ক্যানার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, ১৫টি এসি, ৫টি কম্পিউটার টেবিল, ১২টি কম্পিউটার চেয়ার, ১২টি স্টীলের আলমারী, ৩টি কাঠের আলমারী, ১৫টি দরজাসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, সিসি ক্যামেরা, ফটোকপি মেশিন, স্টীলের ফাইল কেবিনেটসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। তাদের তান্ডবে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণ কাজে  প্রায় দুই কোটি টাকা লাগবে।

তিনি বলেন, শুধু জেলা পরিষদ কার্যালয়ই নয়, ওইদিন মাদরাসার ছাত্ররা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ চারটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকা দু’দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মেয়রের বাসভবন,  আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়সহ ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। তিনি তান্ডবের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সচিব মেহের নিগার, সহকারি প্রকৌশলী আবদুল হামিদ, জেলা পরিষদের সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।

জেলা পরিষদের ক্ষতি পাঁচ কোটি টাকা, দাবি চেয়ারম্যানের

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসাবে যোগদান করেছেন হালিমা খাতুন। গতকাল রোববার সকালে তিনি নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে প্রথমদিন অফিস করেন।

প্রথমদিন কার্যদিবসে উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন এবং তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি সকলের  সহযোগিতা কামনা করেন। এর আগে হালিমা খাতুন মঙ্গলবার  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন এবং বৃহস্পতিবার নাসিরনগরে যোগদান করেন।

এর আগে তিনি ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে হালিমা খাতুনকে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন করা হয়।

উল্লেখ্য, নাসিরনগর উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হয়েছেন।

নাসিরনগরে নতুন ইউএনও হিসেবে হালিমা খাতুনের যোগদান

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবের সময় ভাংচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভাসহ সরকারি, বে-সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) দীপক চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

গতকাল শনিবার দুপুরে প্রতিনিধি দলটি পুড়িয়ে দেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব ভবন, দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন,  ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয় সহ  তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ  বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন।


পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ তানভীর আজম সিদ্দিকী, জেলা পরিষদ শাখার উপ-সচিব মোঃ ফারুক হোসেন, পৌরশাখার উপ-সচিব শায়লা ফারজানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ বড়–য়া, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অঞ্জন দাস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ.বি.এম মশিউজ্জামান প্রমুখ।

পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করতে মাননীয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আমাকে পাঠিয়েছেন।  আজ (শনিবার) আমরা পরির্দশনে এসেছি। এর আগে জেলা প্রশাসক, পৌরসভা ও জেলা পরিষদ থেকে পাঠানো রিপোর্ট আমরা পর্যালোচনা করেছি। আজ সরেজমিনে দেখে যাচ্ছি। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব পৌরবাসীকে পূর্নমাত্রায় সেবা দেয়া যায় এই ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী হেফাজতের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিদর্শন

গত ২৬, ২৭ ও ২৮ শে মার্চ ২০২১খ্রিঃ তারিখে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও তান্ডবলীলা চালায়। সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারকীর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। গত ২৭ শে মার্চের হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক আহুত বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর এলাকায় বিক্ষোভকারীদের
সাথে পুলিশের ব্যাপক সহিংসতা হয়। এ সময় মৌলভীবাজার জেলা থেকে একজন আসামীসহ পুলিশ স্কর্ট উক্ত সংঘাতময় এলাকায় পৌছলে বিক্ষোভকারীরা উক্ত আসামী স্কর্ট পার্টিকে আক্রমণ করে। তারা পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক মারধর পূর্বক অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় মৌলভীবাজার জেলার কনস্টেবল তুহিন হাসানকে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে তার নিকট থাকা ২০ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার মামলা নং-৪৬, তারিখ-৩০/০৩/২০২১খ্রিঃ,
ধারা-১৪৩/৩৪১/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৩৩৩/৩০৭/২২৫-খ/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড)। এ ঘটনায়
প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাতে ০২ হেফাজত কর্মী ১। আরব আলী (৪০), পিতা- মৃত ছমির আলী, মাতা-হুয়ারা বেগম, সাং-দক্ষিণ কেন্দুবাড়ি, ৩নং ওয়ার্ড সুহিলপুর, থানা ও জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২। মোঃ মনির মিয়া (৪২), পিতা-মৃত রমিজ মিয়া, মাতা-মুক্তা বেগম, সাং-সুহিলপুর হিন্দুপাড়া (জয়নাল আবেদীন এর বাড়ির
ভাড়াটিয়া), থানা ও জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াদ্বয়কে সুহিলপুর বাজার হতে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের দেয়া তথ্যমতে সুহিলপুর বাজারের পিয়াসা মিষ্টি ভান্ডার দোকানের টিনের চালা থেকে উক্ত ছিনিয়ে নেয়া ২০ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে হেফাজতের তান্ডবে জড়িত আরো দুইজন ১। জাকির হোসেন (৪৫), পিতা-মৃত মনু মিয়া, সাং-কুট্টাপাড়া, থানা-সরাইল, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২। মোঃ সুমন (৩৪), পিতা- মোঃ চান মিয়া, সাং-ভাদুঘর, থানা ও জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশকে মারধর ও গুলি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ০২ জন হেফাজত কর্মীসহ ০৪ জন আটক, ছিনিয়ে নেয়া ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

ফেসবুকে আমরা..