স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কাঁঠাল চাষীদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এর বিশেষ কদর। জেলায় নরম, রসালো ও চাওলা এই ৩ ধরনের কাঠাল চাষ করা হয়। চলতি বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি বছর ৯৪৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের বাগান করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩১৫ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ২২৫ হেক্টর ও আখাউড়া উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের বাগান রয়েছে। জেলার বাকী ৬ উপজেলার রয়েছে ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের বাগান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট ৪২৫টি কাঁঠালের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিজয়নগর উপজেলাতেই রয়েছে তিন শতাধিক কাঁঠালের বাগান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা।
বর্তমানে উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান।
চাষীরা জানান, বাগান থেকে দুই-দফায় কাঁঠাল বিক্রি হয়। প্রথম দফায় গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে গাছ কিনে নেয়। পরবর্তীতে গাছে কাঁঠাল মাঝারি হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গাছের কাঁঠাল বিক্রি করেন।
উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক বাগান ছাড়াও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে ৪ /৫টি করে কাঁঠাল গাছ। যাদের বাড়িতে সামান্য জায়গা আছে তারাই বাড়িতে কাঁঠাল গাছ রোপন করেন।
উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঠালের বাজার বসে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কাংকইরা বাজার, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারে। এছাড়াও উপজেলার মুকুন্দপুর, চম্পকনগর, ছতরপুর বাজারে পাইকারীভাবে কাঠাল বেচা-কেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা¬, নরসিংদী, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কাঠাল কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার কাঠাল বেচা-কেনা হয়।
উপজেলার হরষপুরের কাঁঠাল চাষী রেনু মিয়া বলেন, তার বাগানে ৬০টি কাঠাল গাছ আছে। তিনি প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টাকার কাঠাল বিক্রি করেন।
চম্পকনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কাঁঠাল বাগানের মালিক কাউছার মিয়া বলেন, এ বছর কাঠালের দাম ভালই তবে কাঁঠালের সাইজ অন্যান্য বছরের চাইতে একটু ছোট। উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আমির আলী ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, তারা ফলের মৌসুমে ফলের ব্যবসা করেন। কাঁঠালের সময় বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান থেকে কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন।
বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, বিজয়নগরের কাঁঠালের স্বাদই আলাদা। ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও বেশী। তিনি বলেন, তিনি বিজয়নগর থেকে কাঁঠাল কিনে সরাইল, বিশ্বরোড, মাধবপুর, ভৈরব সহ বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার খিজির হোসেন বলেন, এবছর উপজেলার মোট ৩১৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ করা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ ও সঠিক পরিচর্ষা করায় এবছর কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার নরম, চাওলা ও রসালো এই ৩ ধরনের কাঠাল চাষ হয়। প্রতিদিন বিজয়নগরের বিভিন্ন বাজারে প্রায় দুই লাখ টাকার কাঁঠাল বেচা-কেনা হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,, আশাকরি এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাঠাল বিক্রি করা হবে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মোঃ রবিউল হক মজুমদার বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাঁঠালের ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতেহ কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে। কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হবে।