রওনক মাহমুদ সৌরভঃ
কেমন করে রং বদলায় অপরাহ্ন আকাশের? ভোরের সবুজ পাতার ফাঁক গলে কীভাবে দেখা দেয় দিনের প্রথম আলো? ঘাসফুলের মাঝে ভৃঙ্গরাজ ফুলের দৃশ্যইবা দেখতে কেমন? বর্ষায় কচুপাতার উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ার অপার্থিব সৌন্দর্য ওরা কি দেখতে পায়? এমন অনেক কিছুই অজানা, অদেখা থেকে যায় রাজধানীর কংক্রিটের দেয়ালে বেড়ে ওঠা শিশুদের।
আপাদমস্তক যান্ত্রিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে আগামীর বড় একটা প্রজন্ম। প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের যতটুকু জ্ঞান, তা কেবল পাঠ্যবই আর ইন্টারনেটের কল্যাণেই। এভাবে কম্পিউটার গেমস, ট্যাব আর স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অতিমাত্রায় প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে শিশুসহ বয়স্করাও মুখোমুখি হচ্ছেন ক্ষতিকর রেডিয়েশনের। প্রকৃতি থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে বিনোদন আর অবসর কাটানোর যে আত্মঘাতী বিকল্প গ্রহণ করেছেন শহুরে অভিভাবকবৃন্দ, তা শিশুদের নানাভাবে ক্ষতি করছে। চোখের সমস্যা, স্থূলতা সহ বাড়ছে শারীরিক নানা ব্যাধি। অ্যাপার্টমেন্ট কালচারে বেড়ে ওঠা এসব ছেলেমেয়ে শৈশব থেকেই নিমজ্জিত হচ্ছে বিষণ্নতা আর একাকীত্বের মতো জটিলতায়।
স্মার্টফোনের কল্যাণে শিশুদের লালন-পালনের কাজ এখন অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। তাদের খাওয়ানো থেকে শুরু করে বর্ণমালা শেখানোর জন্য অভিভাবকরা প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। শিশুরা এভাবেই দিনে দিনে স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। একসময় এটা স্ক্রিন আসক্তিতে রূপ নেয়। ইটকাঠের চার দেয়ালই তখন হয়ে ওঠে তাদের জীবন। আজকের শিশুরা একদিকে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন, অপরদিকে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রযুক্তি আসক্তি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এদেশে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধ ও পর্নোগ্রাফি। পারিবারিক বন্ধন, ভালোবাসা, মমতা ক্রমাগতভাবেই হ্রাস পাচ্ছে।
তাহলে সমাধান কী? সমাধান অবশ্যই আছে। সেটা প্রযুক্তিকে নিয়েই। প্রকৃতি ও প্রযুক্তির যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে পরিবার ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। স্কুলগুলোকে ব্যাঙের ছাতার মতো না করে প্রকৃতিবান্ধব করতে হবে। পরিবার থেকে শিশুদের ফোনে বা ক্যামেরায় প্রকৃতির ছবি তুলতে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। এতে শিশুদের প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠবে। প্রযুক্তিরও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। শিশুরা বড়দের দেখে শিখে। তাই শিশুদের সামনে বেশি মোবাইলে সময় না দিয়ে বই নিয়ে বসতে পারেন অভিভাবকরা। এতে অভিভাবকদের দেখাদেখি শিশুরাও বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে। মোবাইল না, বাচ্চাদের হাতে বই দিন। ছিঁড়ে ফেলুক, তাও দিন।
লেখকঃ
রওনক মাহমুদ সৌরভ
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
Leave a Reply