সাংস্কৃতিক রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: 

শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্যে দেশের অন্যমত অগ্রণী জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ব্যারিস্টার এ রসুল, নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, কথা সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্ল বর্মণ, কবি আবদুল কাদির, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ বহু জ্ঞানী গুনীর জন্মধন্য জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র আনন্দবাজার ও টানবাজার। আনন্দবাজার, টানবাজার, জগৎবাজার, মহাদেব পট্টি, কালাইশ্রী পাড়া, মধ্যপাড়া, কাজীপাড়া ও কান্দিপাড়া শহরের পুরাতন এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখছে। তিতাস গ্যাস ফিল্ড, সালদা গ্যাস ফিল্ড, মেঘনা গ্যাস ফিল্ড দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ যোগায়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের ২য় বৃহত্তম বিদ্যুৎউৎপাদন কেন্দ্র। আশুগঞ্জ সার কারখানা দেশের ইউরিয়া সারের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প কারখানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মিলন মেলা হিসেবে এ দেশের মানচিত্রে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
জেলার আশুগঞ্জে সার কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। জেলার কয়েক শতাব্দী ধরে তাঁত বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। উনবিংশ শতাব্দীতে সরাইলে তানজেব নামক বিখ্যাত মসলিন বস্ত্র তৈরি হতো।
বৃটিশ আমল থেকে রাধিকার বেতের টুপি তৈরি হচ্ছে। জেলার চম্পকনগরে নৌকা তৈরি হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিখ্যাত। জেলার তিনটি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে। এ তিনটি গ্যাস ফিল্ড হচ্ছে- তিতাস, মেঘনা ও সালদা নদী গ্যাস ফিল্ড। বলতে গেলে দেশের অন্যতম চালিকা শক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাস। জেলার ১৯৮৫ সালেই গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে উল্লেখযোগ্য খেলার স্থানসমূহ হলো –নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম, কাউতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুল মাঠ প্রাঙ্গন, কলেজপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় বডিং মাঠ, হালদারপাড়া ইত্যাদি।

তিতাস নদীর শান্ত প্রকৃতি দেখার মত একটি স্থান। এছাড়া তিতাস গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করার মত একটি স্থান। আশুগঞ্জ ও ভৈরব বাজারের মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর উপর ভৈরব রেলওয়ে সেতু তৈরি হয়েছে তা যে কারও মনে দোলা দেবে। এর পাশ ঘেষেই বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরফলে পূর্বের ফেরিঘাটের তুলনায় প্রায় ২ ঘন্টা সময় সাশ্রয় হয়েছে এবং পূর্বাঞ্চলের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাট বিপ্লব ও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
এছাড়াও, আরাফাইল মসজিদ (সরাইল), উলচাপাড়া মসজিদ (সদর), ভাদুঘর শাহী মসজিদ (সদর), কালভৈরব মন্দির (সদর), সৈয়দ কাজি মাহমুদ শাহ মাজার কাজিপাড়া (সদর), বাসুদেব মূর্তি (সরাইল), ঐতিহাসিক হাতিরপুল (সরাইল), খরমপুর মাজার (আখাউড়া), কৈলাঘর দূর্গ (কসবা), কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা), বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর (আখাউড়া), সৌধ হিরন্ময়, শহীদ মিনার, তোফায়েল আজম মনুমেন্ট, শহীদ স্মৃতিসৌধ, মঈনপুর মসজিদ (কসবা), বাঁশী হাতে শিবমূর্তি (নবীনগর), আনন্দময়ী কালীমূর্তি (সরাইল) ইত্যাদি এবং আর্কাইভ মিউজিয়াম অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..