স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নিম্নমানের কাজের কারণে এক মাসের মধ্যেই একটি স্কুলের চিলিকোঠার ছাদ ভাঙতে হয়েছে ঠিকাদারকে। শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিলিকোঠার ছাদ ভেঙ্গে ফেলা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। স্কুলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৮ লাখ টাকা। জমির জুলিয়া টেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পায়।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় নাসরিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণের জন্য চলতি বছরের গত ১৩ জানুয়ারি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদেরকে অবহিত না করেই চিলিকোঠার ছাদ ঢালাই করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে মিকচার মেশিন ছাড়াই হাতে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়, নির্মাণস্থলে ভাইব্রেটর মেশিন ছিল না ও ঢালাইয়ে নিম্ন মানের খোয়া ব্যবহার করা হয়।
গত ২৩ আগস্ট উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে সময় তিনি নির্মাণ কাজে কয়েকটি ত্রুটি দেখতে পান। গত ২৪ আগস্ট উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ছাদ ঢালাই দ্রুত অপসারণ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জমির জুলিয়া ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী জমির উদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী নতুন এসেছেন। প্রায় এক মাস আগে ওই বিদ্যালয়ের তিন তলার ছাদের উপর প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১২ ফুট প্রস্থের চিলিকোঠার ছাদ ঢালাই দেয়া হয়। ঢালাইয়ের সময় তাদের লোকজন উপস্থিত ছিল না।
গত মাসে ছাদ ঢালাই ভেঙ্গে ফেলতে উপজেলা প্রকৌশলী আমাকে চিঠি দেন। তাই শনিবার সকালে শ্রমিকরা ছাদ ভেঙ্গে ফেলে। তিনি দাবি করেন কাজে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও তৃতীয় তলায় চিলিকোঠার ছাদ নির্মাণের কাজ পাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, কয়েকদিন আগে ঢালাইয়ের সেন্টারিং খোলা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে ওই বিদ্যালয়ের গিয়ে তিনতলার চিলিকোঠার ছাদের ঢালাই দেবে গেছে দেখেছি। পরে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানিয়েছি। ছাদটি উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বিদ্যালয়ের তিনতলার উপরে ঢালাইয়ের পর চিলিকোঠার ছাদ প্রায় চার ইঞ্চি পরিমাণ ডেবে যায়। বিষয়টি জানতে পরে উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে চিলিকোঠার ছাদ ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার আমাদেরকে না জানিয়ে এবং আমাদের অনুপস্থিতিতেই ওই বিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ভবনের তিনতলার চিলিকোঠা ছাদের ঢালাই দিয়েছে। তাই ছাদটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি। ঠিকাদার শনিবার সকালে চিলিকোঠার ছাদ ভেঙ্গে ফেলে। ছাদ ধসে পড়ার অভিযোগ সত্য না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হালিমা খাতুন বলেন, ঢালাইয়ের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় উপজেলা প্রকৌশলীর চিঠির প্রেক্ষিতে ঠিকাদার শনিবার চিলিকোঠার ছাদ ভেঙ্গে অপসারণ করে। ছাদ ধসে পড়ার কোন ঘটনা ঘটেনি।