স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানীর পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া কিনে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাদের বড় অংকের টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আবার মাঠ পর্যায়ে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কম থাকায় অধিকাংশ মানুষ তাদের কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মসজিদ ও এতিমখানায় দান করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াজাতকারী কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেই দামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চামড়া বিক্রি হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া কিনে জেলা শহরের পুরাতন কাচারী প্রাঙ্গণ, তোফায়েল আজম মনুমেন্ট (মঠের গোড়া), টি.এ.রোড, জেলরোড, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জড়ো হন। সাধারণত ঈদের দিন বিকেলেই এসব জায়গায় তারা চামড়া নিয়ে বসেন। এসব জায়গা থেকেই ক্রেতারা চামড়া কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যায় তাদের গন্তব্যে। তবে জেলার সবচেয়ে বড় চামড়ার বাজার বসে সরাইল উপজেলা সদরের বিকাল বাজারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আগের বছর গুলোতে শহর এবং শহরের আশপাশ এলাকা থেকে অসংখ্য খুচরা ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী এখানে চামড়া নিয়ে আসতেন। কিন্তু এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। তাঁদের মতে, আগের বছর গুলোতে লোকসান হওয়ায় এবং প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় এবার অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী মাঠ পর্যায়ে চামড়া কিনেনি। তবে বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে চামড়া নিয়ে আসছেন পাইকারদের কাছে। তবে আমরা চামড়া কিনেছি। দাম পাবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়া কিনে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। নগদ দামে চামড়া কিনে পাইকারদের কাছে বাকিতে বিক্রি করতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা একটি বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা ও মাঝারী গরুর চামড়া ২০০/২৫০ টাকা করে কিনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়া মহল্লার চামড়া ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়া বলেন, ৩০ টাকা ফুট হিসেবে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরুর ২২ টি চামড়া কিনেছি।
চামড়া ব্যবসায়ী সুমন মিয়া, শরিফ মিয়া শাকিল মিয়া ও মোহাম্মদ কায়েস মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চামড়ার ব্যবসা করেন। এ বছর পুঁজি সংকট থাকায় ধার দেনা করে কিছু চামড়া কিনেছি। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে গরুর চামড়া কিনে পাইকারদের কাছে ৪০০-৫০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এর মধ্যে পরিবহন খরচ তো আছেই।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ৩০০ টাকা দিয়ে একটি চামড়া কিনে লবণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে আরও ৩০০ টাকা খরচ হয়। এরপর পরিবহন খরচ দিয়ে ট্যানারিতে পাঠাতে হয়। সে অনুযায়ী মূল্য পাব কিনা নিশ্চয়তা নেই।
পৌর শহরের শিমরাইলকান্দি গ্রামের তারেকুল ইসলাম, কাউতলি গ্রামের মেহেদী হাসান, ফুলবাড়িয়ার খাইরুল কবির বলেন, বুধবার (ঈদের দিন) সন্ধ্যা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেই না আসায় চামড়া মসজিদকে দিয়ে দিয়েছি।
সরাইল উপজেলার চামড়ার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, মহিষের চামড়া গড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় এবং গরুর চামড়া গড়ে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা করে কিনেছি।
তিনি বলেন, আমরা চামড়া ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে ভালো দামে চামড়া কিনতাম। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে চামড়া শিল্প বিরাট ধাক্কা খাবে। দেশের চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারের উচিত এই খাতের প্রতি নজর দেয়া।