স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হেফাজতে ইসলামের নারকীয় তান্ডবের দীর্ঘ ৮০ দিন পর অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিতে শুরু করেছে ট্রেন। মঙ্গলবার সকালে তিতাস কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বিরতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হওয়া এই স্টেশনটিতে আবারো প্রানচাঞ্চল্য ফিরে আসে। মঙ্গলবার ভোর থেকে স্টেশনে চার জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বিরতির মধ্য দিয়ে স্টেশনে পুনরায় ট্রেনের যাত্রা বিরতি শুরু হয়েছে। আজ থেকে একটি আন্তঃনগর পারাবত ট্রেনও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থামবে।

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনটিতে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। হামলাকারীরা স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেল বোর্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র আগুনে পুড়িয়ে দিলে পরদিন ২৭ মার্চ থেকে স্টেশনটিতে সব ধরনের ট্রেনের যাত্রা বিরতি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ ।

এদিকে স্টেশনটিতে ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দিলে দুর্ভোগে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। তারা বাধ্য হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন অথবা কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব রেলওয়ে জংশন থেকে ট্রেনে চড়তে হতো। আবার অনেকেই বাসে করে যাতায়ত করতো।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের যাত্রা বিরতি বন্ধ করে দেয়ার পর স্টেশনটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভাসহ আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। গত ৫ জুন সন্ত্রাস প্রতিরোধ মঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্টেশন চত্বরে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন থেকে ২০ জুনের মধ্যে ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা না করলে রেলপথ অবরোধের আল্টিমেটাম দেয়া হয় ।

এদিকে গত ১৩ জুন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত স্টেশনটিকে ‘বি’গ্রেড থেকে ‘ডি’গ্রেডে রুপান্তর করে সনাতনি পদ্ধতিতে সীমিত সংখ্যক ট্রেনের যাত্রা বিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে মঙ্গলবার ভোর থেকে স্টেশন থেকে চার জোড়া ট্রেনের যাত্রাবিরতি শুরু হয়েছে। সীমিত সংখ্যক ট্রেনের যাত্রাবিরতিতে যাত্রী সাধারণের মধ্যে কিছুটা সন্তোষ ফিরে আসলেও তারা স্থগিতকৃত অবশিষ্ট আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর দ্রুত যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক পিযুষ কান্তি আচার্য্য বলেন, ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে যদি পাঁচ জোড়া ট্রেন চালানো যায় তাহলে অবশিষ্ট আন্তঃনগর ট্রেনগুলোও চালানো যাবে। তাই একই পদ্ধতিতে বাকি আন্তঃনগর ট্রেনগুলো থামার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।

একই দাবি জানান সন্ত্রাস প্রতিরোধ মঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংগঠক অ্যাডভোকেট মোঃ নাসির। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি না হলে যাত্রীরা ট্রেন থামার সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারবেন না। তিনি দ্রুত সংস্কার শেষে স্টেশনটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে পূর্বে যাত্রা বিরতি দেয়া সকল ট্রেনের পুনরায় যাত্রা বিরতি দেয়ার দাবি জানান।
সরজমিনে দেখা গেছে, ৪ জোড়া ট্রেনের যাত্রা বিরতির মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দিন পর আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেনে। যাত্রা বিরতর খবরে স্বস্তি ফিরে আসে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের মাঝে। সকালে তিতাস কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বিরতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হওয়া এই স্টেশনটিতে আবারো প্রানচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২ মাস ২০ দিনে অন্তত আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সুরমা মেইল, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, তিতাস কমিউটার ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেসট্রেন যাত্রাবিরতি করেছে। বুধবার ১৬ জুন থেকে নিয়মিত যাত্রাবিরতি করবে ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস।

সিগন্যালিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাশ্ববর্তী তালশহর ও পাঘাচং স্টেশনের মাধ্যমে লাইন ক্লিয়ারিং এর কাজ চলবে। ট্রেন থামবে গার্ড এবং চালকের সমন্বয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ শোয়েব জানান, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গার্ড এবং ট্রেন চালকের সমন্বয়ে ট্রেনে যাত্রী উঠানামা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিগন্যালিং ব্যবস্থা মেরামত করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের যাত্রা বিরতি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫ লাখ মেট্টিকটন খাদ্য শস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ৩০টি পেরি সাইলো একনেকের বৈঠকে পাশ হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ৫টি সাইলো নির্মাণের জন্য টেন্ডারের কাজ প্রক্রিয়াধীন।  আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ১লাখ ৫হাজার মেঃ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক ষ্টীল সাইলো নির্মানকাজ পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

চাল আমদানি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে চালের চাহিদা না থাকলে চাল আমদানি করা হবে না। চালের চাহিদা থাকলে আমদানি করা হবে। চাহিদার সময় চাল আমদানি করা না হলে চালের দাম একশ টাকা কেজি হতো। প্রয়োজন হলে আমদানি হবে। প্রয়োজন না হলে আমদানি হবে না। তিনি আরো বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি যান্ত্রিকিকরণ সহ কৃষকদের ভর্তুকী ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে সরকার।

সরকারি খাদ্য গুদামে চুক্তি অনুযায়ী মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চুক্তি অনুযায়ী মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশুগঞ্জে আধুনিকখাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্প কাজের অগ্রগতিরবিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ, ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা ও নানা জটিলতার কারনে কাজের দেরি হচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে কিনা তা দেখতেই আমরা পরিদর্শনে এসেছি।

সময় বাড়ার কারনে ব্যয় বাড়বে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আরো ছয় মাস সময় বাড়লেও ব্যয় বাড়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন ১০লাখ রোহিঙ্গাকে পুষতে হচ্ছে। প্রতিবছর রোহিঙ্গাদের ২০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। এদেরকে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সাথে ছিলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ), খাদ্য ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকার, আধুনিক ষ্টীল সাইলো প্রকল্পের প্র্রকল্প পরিচালক মোঃ রেজাউল করীম শেখ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি প্রমুখ।

পরে মন্ত্রী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানীর মিলনায়তনে চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানের বিষয়ে চাতাল ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেন।

আশুগঞ্জে সাইলোর নির্মানকাজ পরিদর্শনকালে খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার

ফেসবুকে আমরা..