সুমন অহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক সেবীর হাত থেকে নিজের শিশু কন্যাকে বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছেন অসহায় এক মা। নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যাকে ওই মাদকসেবীর সাথে বিয়ে দিতে রাজী না হওয়ায় মাদকসেবী আবদুল্লাহ তার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করতে চায়। বিয়ে না দিলে মেয়েকে মেরে ফেলার ও মেয়ের সাথে আবদুল্লাহর ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় তিনি (মেয়ের মা) গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে তার মেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগ সূত্রে ও ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার আখাউড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা ওই নারী তার স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তার দুই মেয়েকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
ওই নারীর বড় মেয়ে ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন তাকে কুপ্রস্তাব দিতো। এক পর্যায়ে সে তার শিশু কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু আব্দুল্লাহ আল-মামুন মাদকাসক্ত হওয়ায় ও তার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়ায় তিনি বিয়ে দিতে রাজি হন নি।
এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ’র হুমকি-ধামকির মুখে মেয়েটি স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এতেও পিছু ছাড়ে নি আব্দুল্লাহ। বিভিন্ন সময়ে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে সে পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কোন অবস্থাতেই ওই মেয়ের মাকে রাজী করাতে না পেরে আবদুল্লাহ তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করাসহ অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
এমনকি গত ১০ অক্টোবর আব্দুল্লাহ তার মোবাইল ফোন থেকে ওই স্কুল ছাত্রীর মায়ের মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি পাঠায়।
এ ঘটনায় মেয়ের মা গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে আব্দুল্লাহ, তার বাবা ও মা, সহযোগি অনিক, অয়ন এবং ওই নারীর বোন নুপুর বেগমসহ সাতজনকে আসামী করা হয়। তবে গতকাল শনিবার দুপুর নাগাদ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় নি।
এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগকারী ওই মেয়ের মা বলেন, মাদক সেবীর কাছে আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিবো না। এছাড়া আমার মেয়ের বিয়ের বয়সও হয় নি। কিন্তু তারা (ছেলে পক্ষ) আমার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করিয়ে নিতে চায়। বিয়ে না দিলে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে বিপাকে আছি। মেয়ের সাথে ওই ছেলের (আবদুল্লাহ) ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাইনি।
তিনি বলেন, এর আগে তার মেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছেলেপক্ষকে ডেকে এনে সতর্ক করে দেন। ছেলেপক্ষ আর বাড়াবাড়ি করবেনা বলে ইউএনওকে আশ্বস্থ করেন। এর পরেও ওই ছেলে আমার মেয়েকে আবার বিরক্ত করায় তিনি পুনরায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গেলে নির্বাহী অফিসার তাকে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন ও থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে বলে দেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল-মামুনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই মেয়ের সাথে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ের আলাপ চলছিল। মেয়ের পরিবার ১০ লাখ টাকা কাবিন করানোর কথা বলায় বিয়ে হয় নি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সেলিম উদ্দিন শনিবার দুপুরে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এক এস.আই কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
###