স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট, পিসিআর ল্যাব, ভেন্টিলেটর ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীরা কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকগণ। হাসপালগুলোতে অক্সিজেন সংকট থাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ে উঠেছে ৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো হচ্ছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রিগেড, বঙ্গবন্ধু অক্সিজেন সেবা, বাউনবাইরার কতা অক্সিজেন ব্যাংক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ অক্সিজেন সেবা, ও আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
গত ২০ জুলাই ১৭টি সিলিন্ডার নিয়ে “ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রিগেড”, ২৮ জুলাই ৩৬টি সিলিন্ডার নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন বাউনবাইরার কথা উদ্যোগে “বাউনবাইরার কতা অক্সিজেন ব্যাংক”, ২৯ জুলাই ১৭টি সিলিন্ডার নিয়ে শহর ছাত্রলীগের উদ্যোগে “বঙ্গবন্ধু অক্সিজেন সেবা”, ২৯ জুলাই ৩৮টি সিলিন্ডার নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে “জেলা ছাত্রলীগ অক্সিজেন সেবা”, ও ৩১ জুলাই ১০টা সিলিন্ডার নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন “ আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে “ ফ্রি অক্সিজেন সেবা” দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে৷
বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দেয়ায় রোগীরা সুবিধা পাচ্ছে। অপরদিকে অক্সিজেন সেবা নিয়ে জনগণের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই ১৭টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা করা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রিগেড রোববার পর্যন্ত ২০জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২জন রোগীকে দুইবার সিলিন্ডার রিফিল করে দিয়েছে।
২৮ জুলাই ৩৬টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা করা “বাউনবাইরার কতা অক্সিজেন ব্যাংক” রোববার বিকেল পর্যন্ত ২৭ জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে চারজন রোগীর সিলিন্ডার ৪ বার রিফিল করে দিয়েছে।
২৯ জুলাই ১৭টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা করা “বঙ্গবন্ধু অক্সিজেন সেবা” রোববার বিকেল পর্যন্ত ২৬জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে।
২৯ জুলাই ৪৫টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা করা “জেলা ছাত্রলীগ অক্সিজেন সেবা” রোববার বিকেল পর্যন্ত ৭৬জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে এবং ৩১ জুলাই ১০টা সিলিন্ডার নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন “ আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে “ ফ্রি অক্সিজেন সেবা” রোববার বিকেল পর্যন্ত ৩জনকে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে।
এ ব্যাপারে বাউনবাইরার কতা গ্রুপের এডমিন ও অক্সিজেন ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মাহবুবুর রহমান এমিল বলেন, রোববার বিকেল পর্যন্ত তারা ২৭জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন রোগীকে তিনবার রিফিল করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা শুধু পৌর এলাকাতেই কাজ করছেন। তাদের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়লে তারা উপজেলাভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করবেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো করোনা রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান শুরু করার পর জনগণের মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
এ ব্যাপারে জেলা যুবমৈত্রীর আহবায়ক ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রিগেডের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মোঃ নাসির মিয়া বলেন, তারা রোববার বিকেল পর্যন্ত ২০জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২জন রোগীকে দুইবার সিলিন্ডার রিফিল করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফোন পাওয়া মাত্রই আমরা রোগীর বাড়িতে সিলিন্ডার পৌছে দেই।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন বলেন, রোববার বিকেল পর্যন্ত তারা ৭৬জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহবায়ক সাংবাদিক আবদুন নূর বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেয়া নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে আস্থা ফিরে এসেছে। হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ কমছে। তিনি অসহায় মানুষের পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার বলেন, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোর বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান আশাব্যঞ্জক কাজ। তিনি বলেন, এতে জনগণের মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে আস্থা ফিরে এসেছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (চলতি দায়িত্ব) ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যেই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যেই ভারত থেকে আসা ট্যাংকি ঢাকায় এসেছে পৌছেছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে দুইশত অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে আরো একশত সিলিন্ডারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান শুরু করা একটি ভালো উদ্যোগ। এতে করে মানুষের মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ একরামউল্লাহ বলেন, করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যেভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, এতে করে জনগণের মধ্যে অক্সিজেন পাওয়া নিয়ে আস্থা ফিরে এসেছে। হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ কমেছে।
তিনি বলেন, আশাকরি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু করা যাবে। এটি চালু হলে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা আরো ভালো সেবা পাবেন।
Leave a Reply