সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারীদেরকে জেলার সব মসজিদে তাবলিগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া সমঝোতা মোতাবেক মার্কাজ মসজিদে বয়ান করার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাদপন্থীরা।
গত শুক্রবার সকালে পৌর এলাকার পূর্ব মেড্ডা তিতাসপাড়ায় সাদপন্থীদের অস্থায়ী মার্কাজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রভাষক মোঃ সোহরাওয়ার্দী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীদের বাঁধার মধ্যে দিয়েই জেলার বিভিন্ন মসজিদে আমাদের জামাত চলছে। অনেক সময় জুবায়ের পন্থীরা আমাদেরকে বিভিন্ন মসজিদ থেকে আমাদের জামাতকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে হানাহানির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আমরা বারবারই ধৈর্য্য ধরে সংঘর্ষ এড়িয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত বুধবার (২০ নভেম্বর ) বিকেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহিম পৌর এলাকার পশ্চিম পাইকপাড়ায় তার নিজ মহল্লার আব্দুল আলীম ওয়াফকাহ ট্রাস্ট জামে মসজিদে আছরের নামাজ শেষে মহল্লার কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে নিয়ে দোয়া করার সময় মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারী ৭০/৮০ জন কওমী মাদরাসা ছাত্র ওই মসজিদে ঢুকে মসজিদের ভেতরে হট্টগোল শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আবদুর রহিমের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হয় ও তাকে লাঞ্চিত করে। এ সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মসজিদের ভেতরেই ঢলে পড়েন। সাথে সাথে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ এবিএম মুসা চৌধুরি তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে আবদুর রহিমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তিনি বলেন, প্রশাসন কোনো জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জুবায়েরপন্থী কওমী মাদরাসার ছাত্রদের সাহস দিন দিন বাড়ছে। এ কারনেই আবদুর রহিমের এই পরিণতি।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতে জেলা প্রশাসকের বাসভবেন গেলে তিনি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমাদেরকে বলেন- এটি জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা। আমরা এর কোনো সমাধান দিতে পারব না।
তিনি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কি আলাদা কোনো রাষ্ট্র? এখানে কি বাংলাদেশের সংবিধান প্রয়োগযোগ্য নয়? ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ কি সংবিধানের মৌলিক অধিকার ভোগ করবে না?
এ সময় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল মসজিদে সাদপন্থীদের তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়াসহ পৌর এলাকার বিরাসারে অবস্থিত মার্কাজ মসজিদ তাদেরকে ব্যবহারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা আনিসুর রহমান ও আব্দুল আহাদসহ সাদপন্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীদের সাথে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসনেরও বেগ পোহাতে হয়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আইন দিয়ে ধর্মকে নিয়ন্ত্রন করা যায়না। তিনি বলেন, যেহেতু মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দুইপক্ষকে নিয়ে বসে একটা সমঝোতা করে দিয়েছেন তাই আমরা সাদপন্থীদের বলেছি আপনাদের কোন সমস্যা থাকলে আপনারা মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেন। আমরা কাউকে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে দেবনা।
###
Leave a Reply