সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে চিকিৎসকের “ভুল চিকিৎসায়” রত্মা বেগম-(২৭) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা সদরের “ তিতাস ইউনিটি হাসপাতাল” নামে একটি বে-সরকারি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহআলমের নির্দেশে গত শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করে হাসপাতালে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। নিহত রত্মা বেগম বাঞ্চারামপুর উপজেলার পাড়াতলি গ্রামের জামির মিয়ার স্ত্রী।
এদিকে এই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ সাঈদ দেলোয়ারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে বিষয়টি তদন্ত করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার দুপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে রত্না বেগমের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নুরুস শামস্ জানান, প্রসূতির পেটে মৃত অবস্থায় একটি ছেলে শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পরপরই ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারনেই রত্না বেগম মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার সকালে উপজেলার পাড়াতলি গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী রত্না বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে স্বামী জাকির হোসেন তাকে স্থানীয় তিতাস ইউনিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার পর রত্নাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন হাসপাতালের মালিক মোঃ এমরানুল হক ওরফে আশেক এমরান। পরে রত্নার শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আশিক এমরান জাকিরকে জানান রত্নার গর্ভে দুই সন্তান রয়েছে। ডাঃ জাহিদ এসে রত্মার সিজারিয়ান অপারেশন করবেন। বিকেল ৪টার দিকে আশিক এমরান ও হাসপাতালের নার্স নাছরিন আক্তার রত্মাকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে যান।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ডাঃ জাহিদ অপারেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে স্বজনদের জানান রত্মা স্স্থ্যু আছেন। পরে আশিক এমরান অপারেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে জাকিরকে জানান, রত্মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক জাহিদ ও নার্স নাসরিন রত্নাকে মৃত অবস্থায় অপারেশন কক্ষ থেকে বের করেন।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশে শনিবার রাতে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় তিতাস ইউনিট হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে ক্লিনিকে তালা লাগানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে ‘‘নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ সাঈদ দেলোয়ারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার রাতে তিতাস ইউনিটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে হাসপাতালে তালা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতাল না খুলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
###
Leave a Reply