ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট লেখক শাহরিয়ার কবির

botvনিউজ:

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত সহিংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা সবগুলো রাজনৈতিক দলকে বলছি যে এ নির্বাচন অত্যন্ত সহিংস হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ সহিংসতা যে শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরই হবে তা নয়, আমার উপরও টার্গেট আছে।

আমার চলাফেরা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। চাইলেই আমি কোথাও বেরুতে পারি না। অনেকের উপরই এ অবস্থা।
তিনি গতকাল শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে জিয়াউর রহমান আইএসআইয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আইএসআইয়ে নিযুক্ত হন। আইএসআইয়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে মুক্তিযুদ্ধে গেলেন। শাহরিয়ার রশিদসহ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরাও মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। তারা দেশের জন্য নয়, আইএসআইয়ের মিশন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তাদের মিশন ছিল যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায় তা কিভাবে রদ করা যায়। ওই নীল নকশা অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের পর থেকে পাকিস্তানী করণ, মৌলবাদী করণসহ সবই শুরু হয়।
শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কারো কারো জন্য উৎসব হতে পারে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রচ- আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। ডিসেম্বরে নির্বাচন আসছে, আবার কোন কেয়ামত নেমে আসে এটা নিয়ে তারা আতঙ্কগ্রস্ত।

তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার পর তিনি বলেছেন হিন্দুদের ছাল তুলে নেবেন। যে হামলা করেছে তার গায়ে কি লেখা ছিল সে হিন্দু? এ হামলার জন্য তিনি কিভাবে একটা গোটা সম্প্রদায়কে দায়ী করতে পারেন?
তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সবাইকে এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে। একাত্তরের চেতনায় এখানেও দলীয় মতপার্থক্যের উপরে উঠতে হবে। যেসব বাম দলগুলো ১৪ দলের সাথে নেই আমরা তাদের সাথে আগামী এক মাসের মধ্যে এ কথাগুলো বলবো। এই নির্বাচন নিয়ে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না যে, আমারও জানান দেয়া দরকার, আমি ভোট পাই না পাই।
মতবিনিময় সভায় শাহরিয়ার কবির বলেন, দুই জেনারেলের সময় সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলা হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন আছে তাহলে কিভাবে তার উপর আস্থা রাখা যায়? শহীদদের সংখ্যা নিয়ে তো প্রশ্ন করে পাকিস্তানীরা। বেগম জিয়া পাকিস্তানীদের সাথে সুর মিলাতে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত সহিংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা সবগুলো রাজনৈতিক দলকে বলছি যে এ নির্বাচন অত্যন্ত সহিংস হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ সহিংসতা যে শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরই হবে তা নয়, তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিবে। তারা গৃহযুদ্ধের পথ বেছে নিবে। এই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, এটা কল্পনাও করা যেতো না । তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ওপর আপনারা আস্থা রাখুন। তিনি ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসম্পূর্ণ কাজগুলো আমরা আদায় করতে পারবো।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, কেন্দ্রীয় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা মকবুল-ই-এলাহী, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী।
জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লিটন দেবের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী। মতনিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করে।
###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..