ভালো ফলন হলেও বিজয়নগরে লিচুতে ফাঁটল

botvনিউজ:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ বছর লিচুর ভালো ফলন হলেও গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে লিচুতে ফাঁটল ধরেছে। এতে করে লোকসানের আশংকা করছেন লিচুর বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। লিচুতে ফাঁটল ধরায় চাষীদের মনেও খুব একটা আনন্দ নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় বাজারে লিচুর দাম একটু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। লিচু ব্যবসায়ীরা এবার আর্থিকভাবে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হবেন বলে আশংকা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকগনর ও হরষপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা প্রতি বছর লিচু চাষ করেন। এ বছর এই ৫ ইউনিয়নে ১৭০টি বাগানে লিচুর চাষ করা হয়েছে। ৯২৭ বিঘা জমির এসব লিচুর বাগানে গাছের সংখ্যা নয় হাজার ২৭৫টি। এছাড়া বসতবাড়ির আরো ছয় হাজার ৫৭৭টি গাছে লিচুর ফলন ধরেছে। এসব বাগানে বোম্বাই, পাটনাই ও চায়না-ত্রি জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে। এ বছর এসব গাছ থেকে মোট এক হাজার ৪২৬ মেট্রিকটন ফলন আশা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের বৈরি আবহাওয়ার কারণে লিচুতে ফাটল ধরেছে। এতে ফলন কমার শঙ্কার না থাকলেও ফেটে যাওয়া লিচুতে দাম কম পাবে চাষী। যে কারণে বাজারে এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এক টানা তিন সপ্তাহ গাছে বরিক এসিড ও জিঙ্ক সালফেট স্প্রে করতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিচু বাগানের মালিকরা তাদের উৎপাদিত লিচু বিভিন্ন দামে জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে লিচু ক্রয় করে উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারদের কাছে লিচু বিক্রি করেন।
বিভিন্ন জাতের লিচু প্রতি একশ ২৫০ থেকে ছয়শ ও সাড়ে ছয়শ টাকা দামে বিক্রি হয়।

চায়না থ্রি জাতের লিচু আকারে বড় হওয়ায় এর দাম বেশি। চায়না থ্রি জাতের প্রতি একশ লিচুর দাম ছয়শ থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামোড়া গ্রামের মোর্শেদ মিয়া পাঁচ লাখ টাকায় ৪২০শতক জমির একটি লিচু বাগান কেনেন। ওই বাগানে ১৮০টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনি জানান টানা বৃষ্টির কারনে গাছের লিচু ফেটে যাচ্ছে। তিনি জানান, পাঁচ লাখ টাকায় বাগান কিনলেও পুঁজি তুলতে পারবেন না। দুই লাখ টাকায়ও বিক্রি হবে কি না এই সংশয়ে রয়েছেন তিনি।

একই গ্রামের কাউসার ভূইয়া বলেন, আমার চারটি বাগানে ১৬০টি লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি বছর তিনি ১০/১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি কারণ। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এ বছর ৪/৫ লাখ টাকার বেশি লিচু বিক্রি করতে পারবেন না। তিনি বলেন, তার বাগানের অধিকাংশই লিচুই ফেটে গেছে।
একই ইউনিয়নের কামলমোড়া গ্রামের লিচু বাগানের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তার দুটি বাগানে ৮০টি লিচু গাছ রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও শিলা পড়ায় ৪০টি গাছের সব লিচু ফেটে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এনে ওষুধ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি জানান, গত বছর লিচু বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা আয় করলেও এবার দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন না।

উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের লিচু বাগানের মালিক জুয়েল মিয়া বলেন, তার ছোট ছোট দুটি বাগানে ১৫টি গাছ রয়েছে। গত বছর লিচু বিক্রি করে ৯০হাজার টাকা পেলেও এবছর লিচু বিক্রি করে ২০/৩০ হাজার টাকার বেশি পাব না।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের সেনু মিয়া বলেন, তার একটি বাগানে ২৫টি লিচু গাছ রয়েছে। গাছে মুকুল ধরার সময় বাগানটি এক লাখ ২০হাজার টাকা দাম হয়েছিল। বর্তমানে লিচু ফেঁটে যাওয়ায় কেউ বাগান কিনতেও আসছেন না।

উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর গ্রামের লিচু বাগানের মালিক ফখরুল মিয়া জানান, ১৩টি গাছের একটি বাগান থেকে গত বছর ৫০ হাজার টাকা আয় করলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। এবছর ১৫হাজার টাকার বেশি লিচু বিক্রি করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশকর আলী বলেন, এবছর উপজেলায় লিচুর বেশ ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর উপজেলায় প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। এর আগের বছর প্রায় ১৩ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল। এবছর নূন্যতম ১০/১২ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, লিচুতে ফাঁটল ধরারয় বাগানে প্রয়োজনীয় সার, স্প্রে ও কীটনাশক দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক টানা তিন সপ্তাহ গাছে বরিক এসিড ও জিঙ্ক সালফেট স্প্রে করতে বলা হয়েছে। পরামর্শ অনুযায়ি কৃষকরা বরিক এসিড ও জিঙ্ক সালফেট স্প্রে করলে ক্ষতি কিছুটা কম হবে।
###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..