স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেনের সাথে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকসার সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার ভোরে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে এই দূর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের মোঃ সাদেক মিয়া (৬৮), তার পুত্র রুবেল মিয়া (৩৩) ও পাবেল মিয়া (২৩)। রোববার বাদ জোহর রাজঘর ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে রাজঘর কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হককে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঘটনার জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পিতা সাদেক মিয়াকে চোখের চিকিৎসা করাতে তার দুইপুত্র রুবেল মিয়া ও পাভেল মিয়া রোববার ভোরে রাজঘর থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকসায় করে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওয়ানা হন। আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিতাস কমিউটার ট্রেনে করে তাদের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিলো।
তাদেরকে বহনকারী অটোরিকসাটি আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি মেইল ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে অটোরিকসাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ভাই রুবেল ও পাভেল মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের পিতা সাদেক মিয়াকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছাদেক মিয়াও মারা যায়।
নিহত সাদেক মিয়ার স্ত্রী মোমেনা বেগম ও কন্যা ইয়াসমিন বেগম ঘটনার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই সালাউদ্দিন খান নোমান বলেন, যাত্রীবাহি অটোরিকসাটি তালশহর লেভেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটি অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই দুই ভাই রুবেল মিয়া ও পাভেল মিয়া মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাবা সাদেক মিয়া মারা যায়।
এদিকে নিহতের স্বজনরা দূর্ঘটনার জন্য লেভেল ক্রসিংয়ের গেইট কিপারের গাফলতিকে দায়ী করেছেন। নিহত সাদেক মিয়ার চাচাতো ভাই আলমগীর, স্বজন নোমান মিয়া ও প্রতিবেশী আকতার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দূর্ঘটনার সময় লেভেল ক্রসিংয়ে গেইট কিপার ছিলো না। গেইট খোলা পেয়ে অটোরিকসাটি লেভেল ক্রসিং অতিক্রম সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়।
এ ব্যাপারে লেভেল ক্রসিংয়ের গেইট কিপার মোঃ আনিসুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি গেইট ফেলেছিলাম। অটোরিকসাটি গেইটের নিচ দিয়ে জোর করে যাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম দূর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের সহকারি পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে তদন্ত কমিটির প্রদান করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন, সহকারি প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও অপারেশন) মোঃ আলাউদ্দিন, সহকারি প্রকৌশলী (সংকেত ও টেলিযোগাযোগ) আহাদ আলী খলিফা ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম মাহমুদুর রহমান।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা দূর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কারা ঘটনার জন্য দায়ী এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে আমরা রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।