স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চর-চারতলা গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মুন্সির ছোট ভাই মোঃ জামাল মুন্সী নিহত হওয়ার পর গ্রামজুড়ে চলছে তান্ডব। পুলিশী গ্রেপ্তার এড়াতে ও প্রাণের ভয়ে অভিযুক্তরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ওইসব ফাঁকা বাড়ি-ঘর প্রতিদিন ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হচ্ছে।
গত ২২ জানুয়ারি চর-চারতলা গ্রামের লতিফ বাড়ি ও খন্দকার বাড়ির লোকজনের হামলায় নিহত হন জামাল মুন্সী-(৫৫)। নিহত জামাল মুন্সী আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হানিফ মুন্সীর ছোট ভাই।

অভিযোগকারীরা জানান, জামাল মুন্সী নিহত হওয়ার পর হানিফ মুন্সীর পরিবার ও গোষ্ঠীর লোকজন প্রতিপক্ষ লতিফ বাড়ি ও খন্দকার বাড়ির ফাঁকা ঘর-বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। শুধু তাই নয়, আশুগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। তাঁদের ভয়ে এলাকার মানুষ মুখে কলুপ এটেছেন।
এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আশুগঞ্জ থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিটি মামলাতেই হানিফ মুন্সিকে প্রধান আসামী করা হয়।
বর্তমানে চর-চারতলা গ্রামে এখন বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। যে কোন সময় গ্রামে আরো খুনসহ বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন গ্রামের নিরীহ লোকজন। তবে হানিফ মুন্সির দাবি, লুটপাটের ঘটনা প্রতিপক্ষের নিজেদের সাজানো।


এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি রাতে চর-চারতলা গ্রামের লতিফবাড়ি ও খন্দকার বাড়ির লোকজনের হামলায় নিজ বাড়িতে খুন হন জামাল মুন্সী।
হত্যাকান্ডের পরদিন নিহতের অপর ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর মুন্সী বাদি হয়ে চর-চারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকারসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামী করে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে হত্যাকান্ডের পর পরই গ্রেপ্তার এড়াতে ও প্রাণের ভয়ে লতিফ বাড়ি ও খন্দকার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ির অন্তত ৫০-৬০টি পরিবারের হাজার খানেক নারী-পুরুষ গ্রাম থেকে চলে যায়।

অভিযোগকারীরা জানান, জামাল মুন্সী খুন হওয়ার পর থেকে হানিফ মুন্সীর পরিবারের লোকজন প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ফাঁকা বাড়িতে ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট করছে। বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন চরচারতলা গ্রামের লতিফ বাড়ির মোঃ আবদুল লতিফ মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ রওশন আরা বেগম।
মামলার আরজিতে তিনি বলেন, জামাল মুন্সির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হানিফ মুন্সীর অপর ভাই জাহাঙ্গীর মুন্সী তার স্বামী (বাদির), স্বামীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আশপাশের বাড়িঘরের লোকজনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে এসব বাড়ি ঘর। এ সুযোগে হানিফ মুন্সির নির্দেশে তার পরিবারের সদস্যরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যে সাড়ে ৭ টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত তার বাড়িতে লুটপাটের মহোৎসব চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তার বাড়ির প্রধান গেইট ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির দরজা জানালা আসবাবপত্র বিছানাপত্র, নগদ টাকা স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল পিকআপ ভ্যানে করে প্রকাশ্যে লুটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।


একই দিনে ভাংচুরের ঘটনায় আদালতে অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন চরচারতলা গ্রামের আতিক বাড়ির আবু শহীদ মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ মনোয়ারা বেগম।
মামলার আরজিতে তিনি বলেন, জামাল মুন্সী হত্যাকান্ডের পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির নির্দেশে তার পরিবারের সদস্যরা গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত ওই গ্রামের আতিক বাড়ির আবু শহীদ মিয়ার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে লুটপাটে তান্ডব চালিয়ে গরুর খামার থেকে ৬টি ফ্রিজিয়ান গাভী (বাছুরসহ), স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ প্রায় ৬৫ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র শত শত মানুষের সামনেই পিকআপে ভরে লুটে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ বাঁধা দেয়ার সাহস করেনি।

একই কায়দায় গত ৫ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে চর চারতলা গ্রামের নয়াহাটির খন্দকার বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রবাসী মোঃ সালাহ উদ্দিন খন্দকার এবং মোঃ জিয়াউদ্দিনের বাড়িতে তান্ডব চালিয়ে বাড়ির গেইট, দরজা জানালা, আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ যথাক্রমে ২৩ লাখ এবং ২৭ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয় হামলাকারীরা।
এ সব লুটপাটের ঘটনায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই দুই বাড়ির গৃহকর্ত্রী মোছাঃ নিপা আক্তার এবং ফরিদা বেগম বাদী হয়ে হানিফ মুন্সিসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, শুধু বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাংচুরই নয়। প্রতিপক্ষের বিভিন্ন বাড়ির নলকূপের পাম্প খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাদের জমির ফসলও জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে হানিফ মুন্সীর লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বয়সের একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রামে এখন সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। কেউ ভয়ে কোন কথা বলছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামে আবার খুন-খারাপিসহ বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মোঃ জিয়াউদ্দিন খন্দকার বলেন, জামাল মুন্সী খুনের পর হানিফ মুন্সির নির্দেশে তার গোষ্ঠীর লোকজন গ্রামের লতিফবাড়ি ও খন্দকার বাড়ির লোকজনের বাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও লুটতরাজ শুরু করেছে। হামলা-ভাংচুর এখনো অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, শুধু বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাংচুরই নয়, আশুগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। আমরা উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তী জামিন নিয়েও তাদের ভয়ে গ্রামে যেতে পারিনি। তিনি বলেন, হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের (ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার) পক্ষ থেকে আদালতে পৃথক ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সিআইডি, ডিবি ও পিবিআই তদন্ত করছেন।

এ ব্যাপারে নিহত জামাল মুন্সীর বড় ভাই ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মুন্সীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলার আসামী জিয়াউদ্দিন খন্দকার, সেলিম পারভেজসহ অন্যান্যরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তাদের বাড়ির মালামাল ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত ভিডিও আমার কাছে আছে। তিনি বলেন, হত্যা মামলাকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য আসামীপক্ষ আমি ও আমার গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাবেদ মাহমুদ বলেন, জামাল মুন্সী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৬জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৫জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তিনি বলেন, মামলার আসামীপক্ষ বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় থানায় মামলা করতে আসে নাই। শুনেছি তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে কয়েকটা মামলা করেছে। তারা থানায় আসলে আমরা অবশ্যই মামলা নিতাম। তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিবেশ ভালো আছে।

আশুগঞ্জে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা- ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া করার জন্য ইমামদেরকে অনুরোধ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪-(কসবা-আখাউড়া) এর সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
তিনি শনিবার বিকালে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবদের সাথে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবার। একমাত্র আল্লাহই আমাদেরকে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। আল্লাহই আমাদের ভরসা। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করতে পারেন, মাফ করতে পারেন।
আমরা নিশ্চয় কারণে অকারনে অন্যায় করেছি। সময় এসেছে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে বলি আল্লাহ তুমি আমাদেরকে এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ দাও। আল্লাহ আমরা সঠিক ভাবে তোমার পথে চলব। তুমি আমাদেরকে সুযোগ দাও।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, গত বছর ২৫ মার্চ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। সে ছুটির কারণে আমরা করোনা মহামারির যে আঘাত সেটা বুঝতে পারি নাই। আমাদের করোনা সংক্রমণের হার ছিল কম। মৃত্যুর হার ছিল কম। জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দুরদর্শিতার সাথে করোনা ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন। ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু হলে আমাদের ধারনা হয়েছিলো এ মহমামারি হয়তো পিছনে ফেলে এসেছি। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য আজকে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণ রোগী পাওয়া যাচ্ছে এবং আরও দুঃখের বিষয় গত শুক্রবার এক বছর এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মৃত্যু হার আমরা দেখেছি।

এ সময় আইনমন্ত্রী আলেম-ওলামাদেরকে প্রতিটি ওয়াক্তের নামাজে মসজিদে মসজিদে করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতে বলেন।


এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূইয়া, পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নূর-এ-আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক মোঃ জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন বাবুল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দীন শাপলু, জালাল উদ্দীন চেয়ারম্যান, মাওলা আসয়াদ আল হাবিব, মুফতি আসয়াদুজ্জামান, মুফতি কাজী কেফায়েত উল্লাহ মাহমুদী প্রমুখ।

আখাউড়ায় ইমাম ও খতিবদের সাথে ভার্চুয়ালি মত বিনিময়কালে আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্ধুদের নিয়ে বাসার ছাদের উপর ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাঈনুদ্দিন-(০৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের ফুলবাড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাঈনুদ্দিন ফুলবাড়িয়ার আল-আমীন মিয়ার ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে বন্ধুদের নিয়ে বাসার ছাদে উঠে ঘুড়ি উড়ানোর সময় ঘুড়িটি একটি গাছে ডালে সাথে আটকে যায়। পরে মাঈনুদ্দিন গাছ থেকে ঘুড়ি নামাতে গিয়ে বিদ্যুতের লাইনের সাথে জড়িয়ে আহত হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা মাঈনুদ্দিনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে ডাঃ নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ছেলেটি মারা যায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুটির হাত-পা পুড়ে যায়।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম বলেন, বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবার থেকে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু


বিস্তারিত ঃ গত ২৬, ২৭ ও ২৮ শে মার্চ-২০২১খ্রিঃ হেফাজত ইসলাম কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও তান্ডবলীলা চালায়। সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীতে পরিনত করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের বিশেষ আভিযানিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৬, ২৭ ও ২৮ শে মার্চ- ২০২১খ্রিঃ হেফাজত ইসলাম কর্তৃক বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতাল চলাকালে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের তান্ডবে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ০৭ জন হেফাজত কর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। উক্ত সহিংস ঘটনাসমূহের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের সনাক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য হেফাজতের তান্ডবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯ টি, আশুগঞ্জ থানায় ০৩ টি ও সরাইল থানায় ০২ টিসহ সর্বমোট ৫৪টি মামলা রুজু হয়েছে। এসকল মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামীসহ অজ্ঞাতনামা
৩০/৩৫ হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে। এসকল মামলায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বমোট ২৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরে জড়িত আরও ০৭ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ১৩৭তম জন্মদিন ছিলো গতকাল শুক্রবার। তার জন্মদিনে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তিনটি প্রস্তাব করা হযেছে।
প্রস্তাবগুলো হচ্ছে উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সরাইলের কালিকচ্ছে তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান, নতুন প্রজন্ম যাতে জানতে পারে সেজন্য তার তাঁর কর্মকান্ডকে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা ও প্রতিবছর সরকারি ভাবে তাঁর জন্মদিনে আলোচনা সভার আয়োজন করা।

বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায়। ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তাঁর পিতা দ্বিজদাস দত্ত ছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয় আদর্শের সাধক।  উল্লাসকর দত্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন, এবং পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিদ্যায় ডিগ্রী অর্জন করেন। তবে কলেজে পড়ার সময় ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল বাঙালিদের সম্পর্কে কটূক্তি করার দরুন উল্লাসকর তাকে আঘাত করেন, এজন্য উল্লাসকরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল । এই সময় থেকে তার জীবনে পরিবর্তন আসে। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট স্বদেশী আন্দোলন কালে তিনি অনুশীলন দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এ সূত্রে ক্ষুদিরাম বসু ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এর সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল।

উল্লাসকর দত্ত তখন ‘অভিরাম’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। তাঁর তৈরি বোমা ছুড়েই ক্ষুদিরাম ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে বহনকারী গাডিড় ভেবে ভুল করে দুজন ইংরেজ মহিলাকে হত্যা করেছিলেন। এ অপরাধে ২ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ উল্লাসকরকে মুরারিপুকুর বাগান থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরের দিনই মোজাফফরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইংরেজ ব্যারিস্টার কেনেডি সস্ত্রীক নিহত হন। এ সকল ঘটনা ইংরেজ মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ কলকাতার মানিকতলায় বোমা তৈরির গোপন কারখানাটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে, ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত বোমাটি ছিল উল্লাস করের তৈরী।

বিচারে ক্ষুদিরাম ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে মানিকতলা (আলীপুর) বোমা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে উল্লাসকরকেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তবে ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হলে উল্লাসকর তাঁর আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাশ-এর বিজ্ঞতায় অব্যাহতি পান ও ১৯০৯ সালে বারীন ঘোষের সঙ্গে তিনি আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হন। ১৯২০ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে জন্মভূমি কালীকচ্ছের বাঘবাড়িতে উল্লাসকর ফিরে আসেন। দীর্ঘ দশবছর নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করার পর জীবনের শেষ দিনগুলি নিজেদের আখড়ায় কাটানোর বাসনায় তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

এ দিকে উল্লাসকর দত্তের জন্মদিনে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারের ৩টি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সরাইলের কালিকচ্ছে তাঁর পৈত্রিক ভিটিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান, তাঁর কর্মকান্ডকে লিপিবদ্ধ করে একটি কক্ষে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখা এবং প্রতিবছর তাঁর জন্ম দিনে আলোচনা সভার আয়োজন করা।
এ ব্যাপারে সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বাবুল বলেন, আজকের প্রজন্ম বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তকে খুব একটা জানে না। নতুন প্রজন্ম যাতে উল্লাস কর দত্তকে জানতে পারে সেজন্য সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ১৩৭তম জন্মদিন পালিত, সরাইল প্রেসক্লাবের তিন প্রস্তাব

ফেসবুকে আমরা..