সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বিতরন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে কার্ড দেয়ার স্থান পরিবর্তন করায় স্মার্ট কার্ড না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এমপির নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন অফিসার স্থান পরির্বতন করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের তিলোকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ হওয়ার কথা ছিলো।

এ উপলক্ষে গত ৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে বলা হয়, ৬ আগষ্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিলোকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপজেলার দূর্গারামপুর, তিলোকিয়া, শোভারামপুর, হরিপুর ও কিশোরপুর গ্রামের লোকদের স্মার্ট কার্ড বিতরন করা হবে। এজন্য তিলোকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গনে প্যান্ডেলও তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ সহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে উপজেলার বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজে স্মার্ট কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গতকাল সোমবার সকালে বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনেই স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। এদিকে হঠাৎ করে স্থান পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই তিলোকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে স্মার্ট কার্ড না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

তিলোকিয়া গ্রামের বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, শুনেছি এমপি সাহেবের নির্দেশে স্মার্ট কার্ড বিতরনের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। বুড়া বয়সে নদী পাড় হয়ে বীরগাঁও কলেজে কি যেতে পারব?

এ ব্যাপারে বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ বলেন, রোববার রাতে তাকে স্থান পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিলোকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোকের স্মার্ট কার্ড বিতরনের কথা ছিলো। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে স্থান পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। নদী, নালা, খাল বিল পাড়ি দিয়ে ৫ গ্রামের মানুষ বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে যেতে চাচ্ছেনা। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় এমপি মহোদয়ের নির্দেশে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এমপি স্যার জনপ্রতিনিধি, জনগনের সুখ-দুঃখতো তিনিই ভালো বুঝেন। এছাড়া বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাসটি বড় হওয়ায় সেখানে স্মার্ট কার্ড বিতরনে সুবিধা হবে। তিনি বলেন, সোমবার সেখানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তিনদিন পর্যন্ত এই স্থানে স্মার্ট কার্ড বিতরন করা হবে।
###

এমপির নির্দেশে নবীনগরে স্মার্ট কার্ড বিতরনের স্থান পরিবর্তন করায় জনগনের মধ্যে ক্ষোভ

সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন স্কুল ছাত্রী মোমিনা বেগম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল ছাত্রী নিজে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এই চিঠি পৌঁছে দেয়। এর আগে গত সোমবার একই চিঠি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও পৌঁছায় সে।

মোমিনা বেগম সরাইল উপজেলার বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী এবং আশুগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের বইগর গ্রামের মরহুম নুরুল আমীনের মেয়ে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারদ্বয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে মোমিনা বেগম উল্লেখ করে, সে বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার রোল নম্বর দুই। গত চার বছর আগে তার পিতা নূরুল আমীন দুস্কৃতিকারীদের হাতে খুন হন। এর পর থেকে তার পরিবার চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিনাতিপাত করে আসছে।

আশুগঞ্জ উপজেলার বইগর গ্রামের শেখ সাদি ভূইয়ার ছেলে উছমান ভূইঁয়া প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করে। এ ঘটনায় তার পরিবারের কাছে নালিশ দিলে বখাটে উছমান তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘোষণা দেয়। কয়েকদিন আগে উছমানের পহ্মে গ্রামের ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম, সজিব ভূইঁয়া, আকবর ভূইঁয়াসহ কয়েকজন তার বাড়িতে গিয়ে তার মাকে চাপ সৃষ্টি করে উছমান ভূইঁয়ার সাথে তার বিয়ের কথা রফাদফা করেন।

এদিকে এই বিয়ের খবর পেয়ে মোমিনা বেগম সরাইল উপজেলার কাটানিশার গ্রামে তার ভগ্নিপতি জাবেদ মিয়ার বাড়ি আশ্রয় নেয়। গত ৩ আগস্ট উছমান ভূইঁয়া সেখানে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

চিঠিতে মোমিনা বেগম উল্লেখ করে, তা বিয়ের বয়স হয়নি। সে পড়ালেখা করতে চায়। এছাড়া তার এক বড় বোনের এখনো বিয়ে হয়নি। সে বোন আশুগঞ্জ উপজেলার তিন্নি আনোয়ার মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মোমিনা আক্তার বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দেব বলেন, মোমিনা আক্তার মেধাবি ছাত্রী। মোমিনার দেয়া একটি চিঠি পড়ে আমরা জানতে পেরেছি তাকে বাল্য বিয়ের দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সে এই বিয়েতে রাজি নয়। এ জন্য সে গত ৮ দিন ধরে স্কুলে আসছে না।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজিমুল হায়দার বলেন, স্কুলছাত্রী মোমিনা বেগমের চিঠি আমি পেয়েছি। উছমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা বলেন, মোমিনাকে এ বিষয়ে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে তিনি কথা বলবেন।
###

বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ইউএনওকে স্কুল ছাত্রীর চিঠি

ফেসবুকে আমরা..