সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক দুটি হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি এবং অপর তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সফিউল আজম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বহুল আলোচিত গৃহবধূ কামরুন্নাহার তূর্না হত্যা মামলায় স্বামী আরিফুল হক রনিকে-(৩০) মৃত্যুদন্ড এবং বেলা সাড়ে ১১টায় একই আদালত বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের রিপন মিয়া হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- এবং রিপন মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগমকে-(৩৫) বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
এই মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে শিপন মিয়া-(৪৫), বাতেন মিয়ার ছেলে মোঃ কবির-(৩৪) এবং কাজী মোস্তফার ছেলে মোঃ হাবিব-(২৩)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সফিউল আজম আশুগঞ্জের বহুল আলোচিত গৃহবধূ কামরুন নাহার তূর্না হত্যা মামলার রায়ে তূর্নার স্বামী এবং মামলার একমাত্র আসামী আরিফুল হক রনিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রনি আশুগঞ্জ উপজেলার চর-চারতলা গ্রামের আমিরুল হকের ছেলে। রায় ঘোষনার সময় রনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে আশুগঞ্জ উপজেলার চর-চারতলা গ্রামের আমিরুল হকের ছেলে আরিফুল হক রনির সাথে তার চাচা মফিজুল হকের একমাত্র কন্যা কামরুন নাহার তূর্নার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।
বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ চলছিলো। পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল রাতে তূর্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রনি। পরে তার লাশ বাড়ির একটি পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়। হত্যার সময় তূর্না তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল তূর্ণার বাবা মফিজুল হক স্বামী রনিকে একমাত্র আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে রনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিজ্ঞ বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কয়েক মাস কারাভোগের পর রনি জামিনে মুক্ত হয়ে গা ঢাকা দেন।
এদিকে মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তূর্ণার বৃদ্ধ পিতা মফিজুল হক। তিনি বলেন, পলাতক রনিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকরের জন্য সরকার প্রধান ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাই।
এদিকে মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ভারপ্রাপ্ত পিপি এস.এম ইউসুফ। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে আমরা খুশী।
অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় একই আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের রিপন মিয়া হত্যা মামলার রায়ে উপজেলার ভেলানগর গ্রামের শিপন মিয়া (৪৫), মোঃ কবির (৩৪) ও মোঃ হাবিব (২৩) কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রত্যেককে আরো ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড এবং নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগমকে (৩৫) বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের রিপন মিয়ার সাথে উপজেলার ভেলানগর গ্রামের শিপন মিয়ার মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ চলছিল। পাশাপাশি রিপনের স্ত্রী আমেনা বেগমের সাথে শিপনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
এসবের জেরে গত ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারির কোনো এক সময় আসামিরা রিপনকে হত্যা করে তার শ্বশুর বাড়ি ভেলানগর গ্রামের একটি জমিতে পুতে রাখে। পরে ১০ জানুয়ারি দুপুরে মাটি খুঁড়ে রিপনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন নিহত রিপনের ভাই বারু মিয়া বাদী হয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপরোক্ত চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে আমেনা বেগম জামিনে কারামুক্ত ছিলেন। বাকিরা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ভারপ্রাপ্ত (পি.পি) এস.এম ইউসুফ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোফাক খায়রুল ইসলাম বলেন, মামলার এক নম্বর আসামি আমেনা বেগমকে খালাস দেয়ায় আমি সন্তুষ্ট। তবে দ-প্রাপ্ত বাকি আসামিদের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করব।
###