সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মধ্যপাড়ায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে একটি পুকুর ভরাট করার দায়ে এক পুকুর মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড এবং আগামী তিনদিনের মধ্যে ব্যক্তি খরচে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণ করে পুকুরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। দন্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম মোঃ শাহজাহান মিয়া-(৫৫)। তিনি পৌর এলাকার মধ্যপাড়ার বাওলা দীঘির পাড়ের মরহুম সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
এর আগে পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়–য়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক পুকুর ভরাট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পুকুর ভরাট করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়–য়া পুকুরের মালিকপক্ষের শাহজাহান মিয়া ডেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাহজাহান মিয়াকে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের জেল প্রদান করেন। পাশাপাশি আগামী তিনদিনের মধ্যে ব্যক্তি খরচে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণ করে পুকুরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে মালিকপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এদিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেয়ে পৌর তহশিলের সার্ভেয়াররা ঘটনাস্থলে পৌছে পুকুর মাপঝোঁক করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার মধ্যপাড়া বর্ডার বাজারের উত্তর পাশে ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় বিএস খতিয়ান নং- ৪৩৪ ও বিএস দাগ নং-৬৬১ এর পুকুরটি পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহন ছাড়াই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ওই এলাকার শাহজাহান মিয়া, মোঃ শাহ আলম, পৌর সভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী আহসান কাওছার, মোঃ মুনির হাজী, আলী হোসেনসহ অজ্ঞাত আরো তিন-চারজন মিলে পুকুরটি ভরাট করছেন। প্রায় ১৫ ফুট গভীরের এ পুকুরটির দক্ষিণ পশ্চিমাংশে ৯০০ বর্গফুট ও উত্তরাংশে ৬০০ বর্গফুট অংশ ভরাট করা হয়।
এ বিষয়ে বর্ডার বাজার জামে মসজিদ ও এলাকাবাসীর পক্ষে ডাঃ মো. আবু সাঈদ, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল ইসলাম, মোঃ সুজন মিয়া, মাহবুব আলম, মনির হোসেন, মোঃ সুজন মিয়া প্রমুখ বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরানোর কথা বললেও মালিকরা সেটি না করে কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে পুকুর মালিকদেরকে নোটিশ দেয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেন নি।
এদিকে সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী আহসান কাউসারের নেতৃত্বে রাতের বেলা ট্রাক্টরে করে বালি ফেলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলর কাউছার পুকুর ভরাট করে সেখানে তার একটি অফিস নির্মান করেছেন। ওই অফিসের সারারাত মাদক সেবীরা মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম করে। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী কিছু বলতে সাহস পায়না।
এ ব্যাপারে ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আলী আহসান কাউসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মসজিদকে বর্ধিত করার জন্য পুকুর মালিকগন পুকুর ভরাট করছেন। তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন।
###