সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই বছর রসালো ফল লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লিচু চাষীদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সাড়ে ৬শ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা। তারা জানান, লিচুর উৎপাদন এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়ি জমিতে লিচুর চাষ করা হয়।

আখাউড়া উপজেলার ধলেশ্বর, রাজাপুর, আমোদাবাদ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ এলাকা এবং কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ও বায়েক ইউনিয়নে রয়েছে কয়েকশত লিচুর বাগান।
তবে সবচেয়ে বেশী লিচুর বাগান বিজয়নগর উপজেলায়। বিজয়নগর উপজেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এর খ্যাতি রয়েছে।

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, কালাছড়া, মেরাশানী, কামাল মোড়া, নূরপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, মেরাশানী, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটি দাউদপুর এলাকায় রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ওইসব এলাকার লিচু চাষীরা ধানী জমিতেও লিচুর চাষ করছেন।

দেশের অন্যান্য জায়গায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে লিচু বাজারে আসলেও বিজয়নগর উপজেলার লিচু মে মাসের প্রথম দিকে বাজারে আসে।
বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে আউলিয়া বাজার ও মেরাশানী। এছাড়াও উপজেলার মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারীভাবে লিচু বেচা-কেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়। তবে লিচু কেনার পর ব্যবসায়ীদেরকে বাজারের ইজারা বাবদ ২০০ থেকে ৬০০ টাকা ইজারা দিতে হয়।

এলাকাবাসী ও চাষীরা জানায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচু বাজার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার। সেখানে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার লিচু বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন গভীর রাতে চাষী ও বাগানের মালিকরা তাদের উৎপাদিত লিচু বাজারে নিয়ে আসে। রাত তিনটা থেকে শুরু হয়ে সকাল আটটার মধ্যেই বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায়।
লিচু চাষীরা জানান, বিজয়নগরে পাটনাই, বোম্বাই, চায়না থ্রি ও এলাচী জাতের লিচু চাষ করা হয়। এলাচী ও চায়না থ্রি জাতের লিচু আকারে একটু বড়।
চাষীরা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় ও সার কীট নাশকের দাম সহজলভ্য হওয়ায় এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে।

উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের লিচুর চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, তার দুইটা বাগানে ৮০ -৯০টি লিচু গাছ আছে। গত ১০/১২দিন ধরে তিনি আউলিয়া বাজারে লিচু বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি।
একই এলাকার সোলেমান মিয়া. কাউছার মিয়া ফারুক ইসলামসহ একাধিক লিচু চাষী জানান, তারা প্রত্যেকেই এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকার উপরে লিচু বিক্রি করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। তারা বলেন, ঈদের পর বাজার আরো ভালো হবে। তাদের বাগানে যে পরিমান লিচু আছে আরো ২০/২৫ দিন বিক্রি করতে পারবেন।

মুন্সীগঞ্জের লিচুর পাইকার অভিজিৎ রায় জানান, গত ৭ দিন ধরে তিনি এই বাজারে আসছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় লাখ টাকার লিচু তিনি কিনেন। এখানকার লিচু ভালো ও মিষ্টি হওয়ায় লিচু বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামের লিচু চাষী সোলেমান মিয়া বলেন, এলাকার ছোট ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কম দামে লিচু কিনে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। দালালদের জন্য চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসন একটু তদারকি করলে দালালদের দৌরাত্ম কমে যাবে। চাষীরাও লাভবান হতে পারবে। ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষী অভিযোগ করে বলেন, বাজারের ইজারার কারনে অনেক ব্যবসায়ী এখানে আসতে চায় না। বাজার ইজারামুক্ত হলে আউলিয়া বাজারে আরো বেশি ব্যবসায়ী আসতো।
আউলিয়া বাজারের ইজারা তোলার দায়িত্বে থাকা জসিম উদ্দিন জানান, বাজারটি সাড়ে তিন লাখ টাকায় ডেকে এনেছি। ভ্যাট ও কর মিলিয়ে চার লাখ টাকা পড়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করা হয়।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় পাচঁ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিচু গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনের কাছে লিচু বাগান বিক্রি করা হয়।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার বলেন, দালাল ও ইজারার বিষয়ে লিচু চাষীদের কাছ থেকে তিনি কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মোঃ আবু নাসের জানান, কৃষি বিভাগ লিচু চাষীদেরকে সব ধরনের সহযোগীতা করেছেন। এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৫০ হেক্টর জমির বাগানে সাড়ে ৬শ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য অন্তত ১৫ কোটি টাকা।
###

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচুর বাম্পার ফলন ॥ চাষীদের মুখে হাসি

ফেসবুকে আমরা..