botvনিউজ:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একমাত্র কন্যা কামরুন নাহার তুর্ণার হত্যাকারীদের বিচার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন এক বৃদ্ধ পিতা মফিজুল হক-(৭৫)।
বুধবার দুপুর ১২টায় একমাত্র কন্যা তুর্ণার ছবি সংবলিত একটি ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে একাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন অসহায় পিতা মফিজুল হক। এ সময় বৃদ্ধ মফিজুল হক মৃত্যুর আগে কন্যা হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার আকুতি জানান। একমাত্র কন্যার ছবি বুকে জড়িয়ে প্রেসক্লাবের সামনে তার অবস্থান শহরবাসীর নজর কাড়ে। এসময় তার আহাজারীতে পথচারীদের চোখও অশ্রুসজল হয়ে পড়ে।
প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থানকালে বৃদ্ধ মফিজুল হক জানান, গত ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চর-চারতলা গ্রামের আমিরুল হকের ছেলে আরিফুল হক রনির সাথে তাঁর একমাত্র কন্যা, ঢাকার ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্তনাতকোত্তর করা কামরুন নাহার তুর্ণাকে বিয়ে দেন। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের একটি মেয়ে সন্তানও রয়েছে। ]
গত ২০১৭ সনের ২৪ এপ্রিল লম্পট স্বামী আরিফুল হক রনি তার একমাত্র কন্যা কামরুন নাহার তুর্ণাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর ঘাতক স্বামী তুর্ণার লাশ বাড়ির ছাদের ওপর পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকের ভেতর লুকিয়ে রাখে।
এ ঘটনায় পরদিন মফিজুল হক বাদী হয়ে রনিসহ অজ্ঞাত সহযোগীদের আসামী করে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই গত ২১ মে রনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। পরবর্তীতে রনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে কারামুক্ত হন রনি।
মফিজুল হক আরো জানান, এক পর্যায়ে রনির পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে চাপপ্রয়োগসহ নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় তিনি আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
তিনি আরো বলেন, এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের মাধ্যমে মামলাটি আপোস-নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন তারা। আপোসের প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখান করায় তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তার একমাত্র কন্যা তুর্ণার নামে চরচারতলা গ্রামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি এবং তার জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে চান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই জায়গা ঘাতক রনির পিতা আমিনুল হক ছুট্টু মিয়া জবরদখল করে আছেন। এমতাবস্থায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অসহায় পিতা মফিজুল হক বলেন, তুর্ণা হত্যা মামলার সাক্ষী শেষ পর্যায়ে। তিনি আশাবাদী যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলার রায় হবে। সে জন্যই প্রতিপক্ষের লোকেরা বেপরোয়া হয়ে তাকে উপর্যুপরি নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। তিনি আশংকা করছেন তাকে যে কোন সময় হত্যা করে তার পুরো সম্পত্তি গ্রাস করতে পারে আসামী পক্ষের লোকেরা ।
এ ব্যাপারে রনির পিতা আমিনুল হক ছুট্টুর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি সামনাসামনি কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সমাজে অনেক কিছুই আপস হয়। দুটো পক্ষই আমার আত্মীয়। আমার কাছে আপোসের প্রস্তাব দিয়েছে। চাপ প্রয়োগের কিছু নাই। বাদী সন্তুষ্ট না হলে না করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপাপ্ত পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, মফিজুল হক তাঁকে হুমকি দেয়ার কোনো অভিযোগ থানায় করেছেন কিনা সেটি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ করে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতকে জানানো হবে।
###