সুমন আহম্মেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া
নবীনগর থানার এক হত্যা মামলার আসামী ধরতে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পৈরতলা গ্রামের এক বাড়িতে তান্ডব চালায় নবীনগর থানার পুলিশ। এ সময় পুলিশের হামলার ১০জন আহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে ঝাঁড়– মিছিলসহ টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ২ ঘন্টা সড়ক অবরোধকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগর আঞ্চলিক সড়কে ( গোকর্ণরোড) যানজটের সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নবীনগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ১ এপ্রিল নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক সাঈদুল মিয়া-(৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়।
এই মামলার আসামী কিরণ মিয়াসহ কয়েকজন আসামী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলা গ্রামের গোলাপ মিয়ার বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে এ ধরনের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রোববার দুপুরে নবীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) রুবেল ফরাজীর নেতৃত্বে নবীনগর থানার ৫জন পুলিশ গোলাপ মিয়ার বাড়িতে হানা দেয়।
এদিকে শনিবার রাতে গোলাপ মিয়ার দাদি রাবেয়া খাতুন মারা গেলে গতকাল বাদ জোহর জানাযা শেষে গোলাপ মিয়ার দাদিকে কবর দেওয়ার জন্য গোলাপ মিয়াসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা কবরস্থানে ছিলেন। এ সময় নবীনগর থানার পুলিশ পুরুষবিহীন গোলাপ মিয়ার ঘরে ঢুকে আসামীদের খোঁজে ঘরে তল্লাশী চালায়। এক পর্যায়ে আসামী না পেয়ে পুলিশ গোলাপসহ আশপাশের কয়েকটি ঘরে ব্যাপক তান্ডব চালায় ও বাড়িতে থাকা মহিলাদের বেধরক পিটিয়ে আহত করে। পুলিশের হামলায় ১০জন মহিলা আহত হয়। শোকাবহ বাড়িতে পুলিশী তান্ডবে মহিলাদের চিৎকারে কবরস্থান থেকে লোকজন বাড়িতে এসে নবীনগর থানার ৫ পুলিশকে ঘেরাও করে।
খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল তিনটায় উত্তেজিত গ্রামবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগর আঞ্চলিক সড়কে (গোকর্ণ রোড) বিক্ষোভ মিছিল বরে করে। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গ্রামবাসীকে শান্ত করে বিকেল ৫টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
পৈরতলা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মিনারা বেগম জানান, আসামী গ্রেপ্তারের নামে পুলিশ আমাদের গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি-ঘরে তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। পুলিশের মারধোরে ১০জন নারী আহত হয়।
আহত রোকসানা বেগম বলেন, কোন কিছু বুঝার আগেই সাদা পোষাকে থাকা পুলিশ আমাকে পেটাতে থাকে। তিনি বলেন, ৫জন পুলিশের মধ্যে ২জন পোষাক পড়া ও বাকীরা সাদা পোষাকে ছিলো। আমাদের চিৎকার শুনে লোকজন তাদেরকে ঘেরাও করে রাখে। তিনি দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন।
৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন বলেন, আমার এলাকার গোলাপ মিয়ার বাড়ীতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় গোলাপ মিয়ার দাদি মারা যাওয়ায় কোন বাড়িতে পুরুষ লোক ছিলনা। শুনেছি পুলিশ গোলাপ মিয়ার বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি ঘরে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনোজিৎ রায় বলেন, পুলিশ সাইদুল হত্যা মামলার আসামী কিরণ মিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য দক্ষিণ পৈরতলা গ্রামে গিয়েছিল।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ঘটনাস্থল থেকে নবীনগর থানার পুলিশ সদস্যদেরকে উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কন্ট্রোলকে অবহিত করে নবীনগর থানার পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছিলো। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
###