botvনিউজ:
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানসহ জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে (হাসপাতাল রোডে) টায়ারে আগুন দিয়ে দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে। এতে করে শহরের ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবরোধ পালিত হয়।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১টায় অবরোধ তুলে নেয় ছাত্রলীগ নেতারা।
বিক্ষোভ চলাকালে জেলা ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের আগের (৩০ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান চট্টগ্রাম থেকে ১১জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। রাতের বেলা তিনি সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীমা আক্তারের সাথে বৈঠক করেন।
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কামরুজ্জামান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানোর নির্দেশ দেন। পরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল সহ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকে বেদম মারধোর করে আহত করে। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের সামনে গিয়ে নৌকা মার্কার ব্যাজ লাগানো দেখলেই তাকে নাজেহাল করে কেন্দ্রের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেয়। বুক থেকে নৌকা মার্কার ব্যাজ খুলে নিয়ে যায়।
অবরোধ চলাকালে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান লেনিন, তাজুল ইসলাম আপন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুজন দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাঈম বিল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা আফরিন ফাতেমা জুই, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাজেরা আক্তার কলি, শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক লিমন আল স্বাধীন প্রমুখ।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগের রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। নির্বাচনের দিন মান্নানের নির্দেশে সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মোঃ কামরুজ্জামান আইন শৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ কেন্দ্রের বাইরে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানোর নির্দেশ দেন। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে বেদম মারধোর করে আহত করে। তার এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকার কারনে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় ঘটে।
রুবেল ও শোভন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মোঃ কামরুজ্জামান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল কবিরের অপসারনের জন্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান এবং স্থানীয় দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ঘোষনা দেন।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১টার দিকে তারা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।
এদিকে দীর্ঘ দুই ঘন্টা অবরোধ চলাকালে শহরের প্রধান সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিভাগীয় কমিশনারের সাথে সাক্ষাতকারী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজুর রহমান, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীমা আক্তার বিজয়ী হন। আবদুল মান্নান ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ছিলেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে নির্বাচন করার জন্য যা প্রয়োজন ছিল আমরা তাই করেছি। আমরা কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে বিবেচনায় নেইনি। আমাদের কি ভূমিকা ছিল তা ভোটার ও সুশীল সমাজ জানে।
###