botvনিউজ:
দীর্ঘ নয় বছর পর গত বুধবার রাতে ঘোষিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পদ বঞ্চিত নেতা কর্মীরা।
এসময় ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ‘ছাত্রদলের এই কমিটি মানি না’ মানি না বলে শ্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধরা নব-গঠিত কমিটিকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এর আগে গত বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে হাফিজ উল্ল¬াহকে সভাপতি ও রুবেল চৌধুরী ফুজায়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় করে জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। হাফিজ উল্লাহ জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক হওয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সাত সদস্যের কমিটিতে জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক হওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজহার হোসেন চৌধুরী দিদারকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, অথৈই মোল্লা ও সদর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সালাহ্ উদ্দিন মোল্লাকে সহ-সভাপতি, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সমীর চক্রবর্তীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শাহীনুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করা হয় ।
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা জানান, আজহার হোসেন চৌধুরী দিদার, হাফিজ উল্ল¬াহ, সজিবুর রহমান, অথৈই মোল্লা, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ তৈমুর ও বাইজিদ আহমেদ হেলাল এবং রুবেল চৌধুরী ফুজায়েল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন। সালাহ্ উদ্দিন মোল্ল¬া, সাঈদ হাসান, শাহীনুর রহমান জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন।
পৌর ছাত্রদলের আহবায়কের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা ছাত্রদল নেতা সাঈদ হাসান বলেন, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি পকেট কমিটি করা হয়েছে। যারা মাঠ পর্যায়ে ছিল না এবং দলীয় কর্মকান্ড পালন করতে গিয়ে যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, তাদেরকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া রুবেল চৌধুরী ফুজায়েল ও যুগ্ম সম্পাদক সমীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একটিও মামলা নেই।
সভাপতির পদ পাওয়া হাফিজ উল্লাহ’র বিরুদ্ধে একটি মাত্র মামলা রয়েছে। সে দলে তেমন সক্রিয়ও ছিল না। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া শাহীনুর রহমান একজন ইয়াবা ব্যবসায়ি। ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে শাহীনুর অনেকদিন ঢাকার জেলা কারাগারে ছিল। সাঈদ হাসান বলেন, দ্রুত ছাত্রদলের এই কমিটি প্রত্যাহার করা না হলে আগামী দিনে এই কমিটির সকল সভা, মিছিল এবং সব ধরণের কর্মসূচী আমরা প্রতিহত করব। প্রতিহত করতে যা প্রয়োজন তাই করা হবে। যদি দ্রুত এই কমিটি বাতিল না করা হয়, তাহলে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল নেতারা দল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।
এদিকে গতকাল বেলা তিনটার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে জেলা শহরের কলেজপাড়া এলাকা থেকে পৌর ছাত্রদলের পদ থেকে পদত্যাগ করা সাঈদ হাসান ও ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে জেষ্ঠ্য-সভাপতির পদ পাওয়া আজহার হোসেন চৌধুরী দিদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতারা মোটর সাইকেলে করে একটি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল জেলা শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট, কালীবাড়ি মোড়, পাওয়ার হাউজ রোড, কান্দিপাড়া ও টিএ রোড এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। এসময় নেতাকর্মীরা নব গঠিত ‘ ছাত্রদলের এই কমিটি মানি না’ বলে শ্লোগান দেন।
জেলা ছাত্রদলের নব ঘোষিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ পাওয়া আজহার হোসেন বলেন, তৃণমূল ও কর্মী সমর্থকদের চাহিদার বাইরে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। এটি একটি অকার্যকর কমিটি। কারণ সভাপতির পদ পাওয়া হাফিজ মাঠের আন্দোলনে ছিল না এবং নেই। সভাপতি হিসেবে সে অযোগ্য। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখান করি। কমিটিতে ছাত্রদলের ত্যাগী নেতাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।
আজহার হোসেন চৌধুরী ও সহ-সভাপতির পদ পাওয়া সালাহ্ উদ্দিন মোল্লা বলেন, দলের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। এই কমিটি প্রত্যাহার করে নতুন কমিটি গঠন না করলে আমরা নিয়মতান্ত্রিকাভাবে দল থেকে পদত্যাগ করব।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের নবঘোষিত কমিটির সভাপতি হাফিজ উল্লাহ বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই কমিটি করেছেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে দলের জন্য আমার বড় ভাই অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ হাবিব উল্ল¬াহ খুন হয়েছেন। আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় মাঠে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ছাত্রদলের পদ বঞ্চিত নেতরা আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছে। কিন্তু এই কমিটি গঠনের সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জেলা বিএনপির মতামত নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি। কিভাবে এই কমিটি হয়েছে এটা তাঁরাই ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
###