উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান– সরাইলে ২৬ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সুমন আহম্মেদঃ
সরাইলের বিভিন্ন গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বাণিজ্য। লাখ লাখ টাকার চুক্তিতে সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এক শ্রেণির ঠিকাদার এ কাজ করছেন। গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজসরাইল গ্রামের হাবিব মিয়ার বাড়িতে দেয়া হয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এ ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। গতকাল নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে সংযোগ দেওয়ার ৫ দিন পরই এ লাইনটি সহ আরো ২৫ টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন প্রশাসন। গাঁ ঢাকা দিয়েছেন অবৈধ সংযোগে সহায়তাকারী রাঘব বোয়ালরা।

সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্র জানায়, মাটির নিচের খনিতে আমাদের গ্যাস অফুরান নয়। ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে গ্যাসের মজুদ ও কমে আসছে। এ লক্ষ্যে সরকার গত প্রায় ৩-৪ বছর আগেই দেশের সকল আবাসিক সংযোগ স্থাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন। সুযোগে কিছু ঠিকাদার অর্থের লোভে জালজালিয়াতির মাধ্যমে সরাইলের বিভিন্ন জায়গায় গোপনে সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। এ জাতীয় কিছু সংযোগ অভিযানের মাধ্যমে আগে বিচ্ছিন্নও করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল সকালে নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসা বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানীর (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) প্রকৌশলী মো. শফিকুল

ইসলামকে সাথে নিয়ে পুলিশ সহ অভিযানে নামেন। প্রথমেই চলে যান নিজসরাইল গ্রামের বহুতল ভবনের মালিক হাবিব মিয়ার বাড়িতে। গত শুক্রবার গভীর রাতে দেওয়া সংযোগের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান। কোন ধরনের বৈধতা না থাকায় ওই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। একই গ্রামের মো. আলমগীর মিয়া সাড়ে ছয় বছর ধরে বিল দেন না। তাকে ৭৮ হাজার টাকা বিল প্রদানে বাধ্য করেন। সেই সাথে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উপজেলা সদরের পাশে সাঘরদীঘি পাড় গ্রামে অভিযান চালিয়ে বসতবাড়ির ২৫টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অভিযান চলাকালে কিছু ঠিকাদারকে উপজেলা সদর ও আশপাশে অস্বস্থিতে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন জানায়, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সদর ইউনিয়নের নিজসরাইল গ্রামের হাবিব মিয়ার সদ্য নির্মাণকৃত বহুতল ভবনে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য রাস্তার মাটি কাটতে শুরু করে শ্রমিকরা। নিজ সরাইল গ্রামের কার্পেন্টিং করা সড়ক থেকে হাবিবের বাড়ির দূরত্ব দেড় শতাধিক গজ হবে। আর উপজেলা চত্বর থেকে আধা কিলোমিটার। থানা তো আরো কাছে। স্থানীয় লোকজন দেখে এ কাজকে অবৈধ বলে বাঁধা দেন। মুহুর্তের মধ্যে মাটি কাটা বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদার ও লেবাররা। থানা থেকে ছুটে আসেন পুলিশ সদস্য। রাত ১টার দিকে অতি গোপনে প্রথমে সড়কের পাশের পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ও পরে কার্পেন্টিং করা সড়কটি কেটে ফেলেন। লোকাল মিস্ত্রি দিয়ে বাখরাবাদ গ্যাস লাইনের পাইপ ছিদ্র করে সংযোগ স্থাপন করেন। কাজ চলাকালে চারিদিকে চলে বিশেষ পাহারা।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এ কাজে পুলিশের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। কেউ অভিযোগ করে থাকলে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, এই সড়কটি কাটার অনুমতির জন্য পরিষদে কেউ কোন আবেদন করেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-মহা ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুর রেজা বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি উপায়ে এ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবাসিক সংযোগ দেওয়া বা অন্য জায়গার সংযোগ স্থানান্তরের কোন বিধান নেই। এ জাতীয় অবৈধ কাজের দায়ে জেল জরিমানা দুটিই হতে পারে। সরজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসা বলেন, হাবিব মিয়া সম্পূর্ণ অনিয়ম ও বেআইনি কাজ করেছেন। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..