দীর্ঘ ৭ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিকলমুক্ত হলো প্রতিবন্ধী শিশু বাদল

 

সুমন আহম্মেদঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দীর্ঘ সাত বছর পর শিকলমুক্ত হয়েছে প্রতিবন্ধী শিশু বাদল। খবর পেয়ে গত শনিবার দুপুরে পুলিশ পৌর এলাকার মৌলভীপাড়ার বাসায় গিয়ে শিশু বাদলকে শিকল মুক্ত করেন। তবে তার ভবিষ্যত কি হবে সে বিষয়ে কোনো সুরাহা হয় নি।

শিশু বাদলের বয়স ৯ বছর। বাদলের জন্মের তিন মাস পরই চলে যায় তার বাবা মোঃ রিপন মিয়া। বাবা চলে যাওয়ার দুই বছর পর চলে যায় তার মা মোমেনা বেগম। বর্তমানে দাদীর কাছেই থাকে বাদল।

বাদলের দাদী জানান, মানসিক প্রতিবন্ধী বলে বাদলকে দিনের বেলা শেকলে বেঁধে এবং রাতের বেলা মুক্ত করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মোঃ রিপন মিয়ার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের মোমেনা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানেক পর জন্ম হয় বাদলের। মাত্র তিন মাস বয়সে বাদলকে ফেলে চয়ে যান তার বাবা রিপন মিয়া। দাদী শাহানা ও মা মোমেনা কষ্টে শিষ্টে বাদলকে বড় করে তুলতে থাকেন। বয়স বাড়তে থাকলে বাদলের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও ধরা পড়ে। বাদল কথা বলতে পারতো না। এছাড়া সে বেশ চঞ্চল।

এ অবস্থায় দুই বছর বয়সি বাদলকে দাদীর কাছে তুলে দিয়ে চলে যায় মা মোমেনা। এর পর থেকে অনেকটা দিশাহীন হয়ে পড়েন দাদী শাহানা বেগম। স্বামী না থাকায় শাহানা বেগমের উপরই বর্তায় নাতি বাদলকে দেখাশোনায়। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এ থেকে যে আয় হয় তা থেকেই বাদলকে নিয়ে চলতেন। তবে বাদলের চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ তাঁর কাছে ছিলো না। প্রতিবেশী কেউ কেউ আর্থিকভাবে সাহায্য করে বাদলের চিকিৎসা করিয়েছেন। তবে এতেও বাদলের কোনো উন্নতি হয় নি।

দাদী শাহানা জানান, প্রায় নয় বছর আগে তার ছেলে রিপন কিছু না বলেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর বছর সাতেক আগে তার ছেলে বৌ চলে যায়। শাহানা অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন-যাপন করতেন। তবে কারো বাড়িতে তার মানসিক প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। আবার বাড়িতে রেখে গেলেও বাদল এদিক-ওদিক ছুটে যেতো। যে কারণে গত সাত বছর ধরেই বাদলকে তিনি আটক করে বাইরে রাখেন।
প্রথমে তিনি রশি দিয়ে বেধে রাখতেন। বয়স বাড়ার পর আর রশিতে কাজ হয় না। রশি ছিড়ে ফেলতো বাদল। এ অবস্থায় কয়েক বছর ধরে তাকে শিকল দিয়ে তিনি বেধে রাখেন। আর্থিক সামর্থ না থাকায় নাতিকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

প্রতিবেশি সরুফা বেগম বলেন, ‘ছোট বেলাতেই ছেলেটির বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। পরে তার মাও চলে যায়। এ অবস্থায় দাদী তাকে দেখাশুনা করে। তিনি গরীব মানুষ। কাজ করে খায়। যে কারণে বাদলকে শিকলে বেধে রেখে যান তিনি।
প্রতিবেশী আল-আমিন চৌধুরী জানান, বাদলের দাদী অনেকটা অসহায়। তাকে অন্যের বাড়ি কাজ করতে হয়। যে কারণে নাতিকে নিয়ে তিনি বেশ বিপাকে আছেন। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তো বাদলের কোনো একটা গতি হতো।

পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলা গ্রামের মোঃ নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘শিশুটির দাদীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনিও অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিশুটি মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে নিয়ে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। চিকিৎসার জন্য আমি মাঝে মাঝে কিছু টাকা শিশুর দাদীকে দিয়েছি। একবার আমি নিজে গিয়েও ঢাকা থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম জানান, খবর পেয়ে তিনি ওই বাড়িতে ছুটে যান। প্রথমে তিনি শিশুটিকে শিকলমুক্ত করেন। কেননা, এ বিষয়টি খুবই অমানবিক। এখন সবার সাথে আলোচনা করে ওই শিশুটির চিকিৎসা করানো ও তার দাদীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় কি-না ভেবে দেখা হচ্ছে।
###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..