ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি

botvনিউজ:

গত ৩১ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন চলাকালে সদর উপজেলার বিভিন্নস্থানে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের অশোভন আচরন ও শারিরীকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোঃ হায়াত উদ দৌলা খানের কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে ছাত্রলীগ নেতাদের আশ্বাস দেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ৩১ মার্চ সকালে সদর উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর পরই নির্বাচনী দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে নৌকার সমর্থক ও জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করতে থাকে। সকালে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কামরুজ্জামানের নির্দেশে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রের সামনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবিউল হোসেন রুবেলসহ ১০/১২জনকে পিটিয়ে আহত করে। অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ভেতর থেকে এএসআই আছহাব নৌকা প্রতীকের দুইজন এজেন্টের বুক থেকে নৌকা প্রতীকের ব্যাজ খুলে ফেলে ও তাদেরকে মারধোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও এসিল্যান্ড মোঃ কামরুজ্জামানের নির্দেশে পুলিশ সদর উপজেলার বরিশল ও উলচাপাড়া গ্রামে নৌকার মার্কার সমর্থকদের বাড়িতে তল্লাশী ও নেতা-কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এ ছাড়াও এসিল্যান্ড মোঃ কামরুজ্জামান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার তনিমা আফরাদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবিরের নির্দেশে সদর উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের সামনে নৌকা মার্কার সমর্থক ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন বলেন, জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান স্মারকলিপি গ্রহণ করে তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে জেলা ছাত্রলীগ দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচী পালন করবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানসহ জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে (হাসপাতাল রোডে) টায়ারে আগুন দিয়ে দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবরোধ পালিত হয়।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১টায় অবরোধ তুলে নেয় ছাত্রলীগ নেতারা।
বিক্ষোভ চলাকালে জেলা ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের আগের (৩০ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান চট্টগ্রাম থেকে ১১জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। রাতের বেলা তিনি সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীমা আক্তারের সাথে বৈঠক করেন।
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কামরুজ্জামান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানোর নির্দেশ দেন। পরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল সহ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকে বেদম মারধোর করে আহত করে। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের সামনে গিয়ে নৌকা মার্কার ব্যাজ লাগানো দেখলেই তাকে নাজেহাল করে কেন্দ্রের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেয়। বুক থেকে নৌকা মার্কার ব্যাজ খুলে নিয়ে যায়।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মোঃ কামরুজ্জামান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল কবিরের অপসারনের জন্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান এবং স্থানীয় দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ঘোষনা দেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে নির্বাচন করার জন্য যা প্রয়োজন ছিল আমরা তাই করেছি। আমরা কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে বিবেচনায় নেইনি। আমাদের কি ভূমিকা ছিল তা ভোটার ও সুশীল সমাজ জানে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার দুর্ভাগ্য । নির্বাচন কমিশন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে নির্বাচন করার জন্য যা প্রয়োজন ছিল আমরা তাই করেছি। তিনি বলেন, সার্কিট হাউজে আমার সাথে অনেক লোক দেখা করেছে। আমি কোন পক্ষপাতিত্ব করিনি। কে বা কারা নির্বাচন করেছে তাও আমি জানি না। ম্যাজিষ্ট্রেটদেরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেখানে পাঠিয়েছে।
###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা..